আব্বুনী -
এইচ বি রিতা
Published on: জুন 10, 2016
কি দিয়ে শুরু করি! সালাম, তোমার শারীরিক কূশলাদী, নাকি শুভেচ্ছা! মৃত মানুষকে কি দিয়ে সন্মোধন করতে হয়, ঠিক জানা নেই!
আব্বুনী, আজ বহু বছর তুমি নেই। তোমার চলে যাওয়ায় সব কেমন বদলে গেছে! বাড়ীর শোভা, দেয়ালের রঙ, মানুষ গুলোর চেহারা,আন্তরিকতা……সব কেমন বদলে গেছে। জীবন বদলে গেছে, জীবনের পটভূমি নড়বড়ে; সুখ গুলো ও কেমন ছন্নছাড়া! কিছুই আগের মত নেই।
আব্বুনী, মনে আছে তোমার? প্রায়ই ভোর বেলা তুমি টিপটিপ পায়ে অন্দ্বকারে মাথার কাছে এসে দাঁড়াতে, ডাকতে না শুধু একটু শব্দ করতে। ঘুম ভেঙ্গেই যখন তড়িঘড়ি মাথা ঘুরিয়ে তোমার দিকে দেখতাম, অমনি তুমি হেটে চলে যেতে তোমার ঘরের দিকে। আমি লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়তাম, তোমাকে গায়ে মালিশ করে দেবো বলে। ঘুম ভেঙ্গে ভোর বেলা, অন্তত আমার সেবা নেয়ার জন্য হলেও তুমি আমাকে ডাকতে। আর সেই ডাক শোনার জন্য, উদ্গ্রীব হয়ে অপেক্ষা করতাম প্রতিদিন……।! তুমি কি বুঝতে, তোমাকে কত ভালবাসতাম?
আব্বুনী, কি যে বদঅভ্যাস ছিল তোমার! প্রায় রাতেই আমাদের ঘুমের বারোটা বাঝাতে। রমিজ উদ্দীন হোটেলের খাশীর মাংস-পরোটা আর আনন্দের কেইক নিয়ে এসে আমাদের সব ভাই বোন, ভাবীদের জোর করে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে। জোর করে মুখে তুলে খাওয়াতে! কত বিরক্ত হতাম মাঝে মাঝে! ঘুম ঘুম চোখে খেতে কি ভাল লাগে বলো! তুমি বলতে, “খেয়ে নে খেয়ে নে, আমি না থাকলে কেউ অমন করে খাওয়াবে না”! তখন বুঝিনি। যখন বুঝলাম, তখন তুমি নেই।
এখন আর কেউ অমন করে ঘুম ভাঙ্গিয়ে খাইয়ে দেয়না! এখন কেউ, ভালবাসার অত্যাচারে অতীষ্ট করে তুলেনা!
যখন তোমার অন্তিম মূহুর্তে দেশে গেলাম, আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম তোমার কন্ঠ শুনবোনা বলে। কিন্তু তুমি কথা বললে! ভাংগা ভাংগা শব্দ জুড়ে অনেক কথা বললে! ১৯ দিন ছিলাম, পুরোটা সময় তোমার গা ঘেষে! তোমার পিঠ চুলকে দিলাম! তোমার পা টিপে দিলাম! তোমাকে ধরে ধরে গ্যারেজের উঠোনে হাটালাম! তোমার চোখ থেকে টুপটুপ করে জল গড়িয়ে পরলো! কিছু বলতে পারলে না, কিন্তু পড়ে নিলাম তোমার অব্যাক্ত যাতনা! তুমি বুঝে গিয়েছিলে তুমি চলে যাচ্ছো, আমিও বুঝে গেলাম! কিছুই করার ছিলনা! শেষের দিকে তুমি কেমন অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকতে! যে মানুষটির হাতে একদিন বেহালা হারমোনি থাকতো, কন্ঠে লালনের সুর, সে মানুষটি হঠাৎ কেমন নির্জিব হয়ে গেলে! পানীর জন্য ছটফট করতে, পরিমানের বেশী পানী খাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে গেল! এখনো চোখে ভাসে তোমার কঠোর শাসন, একচ্ছত্র নিয়ম, পৌরুষতীপ্ত ব্যাক্তিত্ব…. তোমার জনপ্রিয়তা শহর জুড়ে! হঠাৎ করেই সব কেমন নিভে গেল!
আব্বুনী, এখনো বাড়ীতে গেলে তোমার যাদুঘরে ঢুকি। ধূলী পরা তোমার বসার চেয়ার, বিছানা, দোলনা, তোমার সংগীত বাদ্যযন্ত্র গুলো, তোমার লিখার কলম, শহস্র সংগীত-কবিতা-নাটকের ডায়েরী গুলো নিজ হাতে পরিস্কার করি! মনে হয়, তুমি একানেই আছো। সর্বত্র কেমন তোমার গন্ধ পাই!
আব্বুনী, শত জনমেও তোমার ঘাটতি পূরণ হবার নয়; তুমি এমনই এক বাবা! তোমার জন্য মন কাঁদে, খুব কাঁদে!

Add to favorites
2,248 views