আমি ভাল আছি -
এইচ বি রিতা
Published on: মার্চ 13, 2016
প্রায়ই ভাবি, কষ্ট আর দুঃখের মাঝে ব্যবধান কত? দুঃখটা মানুষের না পাওয়ার, আকাঙ্খার; যেন পরবাসী কেউ! আর কষ্ট; যেন গায়ে গায়ে, পায়ে পায়ে জড়িয়ে থাকা অনাকাঙ্খিত কেউ! ব্যবধান আছে বৈকি। কোন তীব্র বাসনার বাস্তব রুপায়ন না হওয়াটা দুঃখ। কোন তীব্র অনুভুতি জীবন থেকে চলে যাওয়াটাই কষ্ট!
কষ্টগুলো খুব নির্লজ্জ! একবার জন্মে গেলেই হলো; শেকড় বাঁকরে নিজের পোক্ত অবস্থান নিশ্চিত করে ছাড়ে। সময়ের সাথে কখনো ফিকে হয়, কখনো তীব্র থেকে তীব্রতর!
ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিটি মানুষের কষ্ট একক রুপাকার! সকালে এক রুপ, তো সন্ধ্যায় ভিন্ন রুপ। একি কষ্ট; কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান।
কষ্টের ও অদ্ভুত এক আশ্চর্য্য কন্ঠ আছে। সে কন্ঠ খুব মিহি করুণ ঠিক বেহালার সুরের মত, রাতের নিস্তব্দতা ভেঙ্গে হ্নদয়ের গহীনে যেন নীল-বেগুনী-কালো-খয়েরী হরেক রঙা কষ্ট ছুড়ে দেয়। সে কষ্টে হাটুজল বুকের ভাজে ভাজে, কষ্টজলে ফুসফুসে শুরু হয় দমের দামাদামী! বেহালার বিষন্ন সুরে হ্নদয়ে যোগ হয় ভাঙ্গনের শব্দ! এসবই কষ্ট!
বহুল প্রকাশিত কষ্টের আড়ালেও থাকে কিছু কষ্ট! ওদের অলিখিত দলিলে সবার নজর পরেনা। ওরা অনেকটা গুপ্ত হত্যার মত চুপিসারে আসে যায়। ওরা নক্ষত্রের নিচে ঘুমন্ত মানুষগুলোর চোখের পাতায় টুকটুক হাটে আজীবন; ওদের অবসাদ নেই, ওরা ঘুমায় না!
মানুষ বাঁচে ক’দিন বলো!
কষ্টকে পোষ মানানোর মত যথেষ্ট আকাশ কি রয়েছে আমাদের বুকে? সীমারেখায় নির্দিষ্টতা, সময়ের পায়ে শিকল বেঁধে দেয়, সে শিকলের গিঁটে গিঁটে কষ্ট! কেউ দেখে না! কেউ বোঝেনা!
কিছু কষ্ট আগুনের পরিসীমাকেও হার মানায়। কিছু কষ্ট একান্ত নিজের হয়, গোপন কক্ষে তালাবন্ধ থাকে আমৃত্যু। সে কষ্টের কোন পরিমাপ নেই, সীমানা নেই, আকার বা নিরসন নেই।
আমি ভাবি, আমাই সর্বোচ্চ কষ্টের অধীকারী। হয়তো অন্যরা ভাবছেন, তারাই সকল কষ্টের ধারণকারী। কষ্ট কার নেই? কষ্ট সবার আছে। এক সাথে একই বিছানায় ২০ টি বছর পাশাপাশি শুয়েও কেউ কষ্টে থাকেন। সমযোতার চাদরে শান্তিচুক্তিতে জড়াজড়ি করা দম্পত্তির মনেও একলা রাতে কষ্ট এনে হানা দেয়। আমাদের মনে হাজার রকমের কষ্টের বাস- যোগ-বিয়োগের কষ্ট, বিচ্ছেদের কষ্ট, একান্ত আপন কারো পরশ নেয়ার কষ্ট, না বলতে পারার কষ্ট, হজম করে যাওয়ার কষ্ট, সহন না হওয়ার কষ্ট….আরো কত রকমের কষ্ট!
তবু একই নিয়মে রোজ ভোর হয়, রোজ রাত্রী নামে! পূন্য লাভে অনেকেই জাগতিক কষ্ট গুলো ভুলে থাকার চেষ্টা করেন! ভাবেন, জাগতিক কষ্ট-ক্লেশ স্থায়ী ও চিরস্থায়ী নয়, মিছে কেন তাদের পিছনে ছুটা? বরং স্রষ্টাকে সিজদা দেই, উনাকে বলি; তিনিই কষ্ট উপষমের একমাত্র মালিক। তিনি কিন্তু কষ্ট উপষম করেন না, তিনি কষ্ট সহন করার ধৈর্য্য দান করেন! যার হাত কাটা পরেছে, যে মায়ের কোল খালি করে যুবক সন্তান চলে গিয়েছে, যার মরণ রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে, যার একাকী বিছানায় প্রতি রাতে কারো স্পর্শ আক্ষেপে বিনিদ্র রজনী কাটে, যে মাতা তার সন্তানকে ছুঁতে চোখের জলে মূর্ছা যান, তাদের সকলের কষ্টই জাগতিক। এ কষ্টের উপষম নেই; উপাসনায় স্রষ্টা কেবল ধৈর্য্য ধারণ ক্ষমতা বাড়ান।
কষ্টের উপষম নেই! কষ্টের আকার নেই; কেবল ঘনত্ব আছে!
তবু কষ্ট আড়াল করে প্রতিদিন অসংখ্যবার মিথ্যে বলতে হয়- “আমি ভাল আছি”!

Add to favorites
2,284 views