ইন্দ্রনীল-৭ -
এইচ বি রিতা
Published on: মার্চ 26, 2014
মা এর আহাজারীতে আকাশ বাতাস কেঁপে কেঁপে উঠছে। লোক সরগমে ভ্যাবসা এক মৃদু গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে। করুণ ধ্বনিটুকু ঘরের দেয়ালে আছড়ে পরে পরে এক অদ্ভুদ রকমের প্রতিধ্বনি হচ্ছে ঘরময়।
ইন্দ্রনীল মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক কোণায়। চোখ দুটো এতক্ষনে ফুলে উঠেছে। ভীষণ মায়াময় মুখে এই মুহুর্তে বিস্বাদের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।এত মায়া লাগছে…!
কিছু মানুষ ন্যাকিস্বরে জাগতিক ভদ্রতা রক্ষা করে চলেছেন। যারা একদিন বুকের গোপন কুঠুরী হতে সাপের জিভের ন্যায় জিভ বের করে কৌশলে সবটুকু বিষ ঢেলে দিত আমার অন্তরাত্মায়, আজ তাদের চোখে আমার প্রস্থানে করুণার জলকনা! জীবিত হলে বিরক্তিতে এতক্ষনে আমার কপাল কুঁচকে যেত! ভাগ্যিস আমি এখন অসাড়। ব্যাবিলন সভ্যতার মত আমি এখন বিলুপ্ত এক অসাড় জড়বস্তু।
অস্থিরতা এক ভয়ংকর জিনিস। একবার মগজে ঢুকে পরলে আর রক্ষা নেই। মগজ থেকে ধীরে ধীরে শরীরের নানান অঙ্গে শিকড় বাঁকর গজিয়ে পোক্ত এক বসতি গড়ে তুলে। আর তার সেই রাজ্যে কেবল তারই আধিপত্য। যখন খুশী, যেদিকে খুশী দিনরাত অত্যাচারের বিষবাষ্পের ন্যায় চলে তার তান্ডবলীলা।
সম্পর্ক বুঝেনা ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা। জীবন বুঝেনা বেঁচে থাকার মানে। জ্যোৎস্না ঝরে পড়া দ্বিপ্রহরে আসে ইন্দ্রনীলরা! উদাসী করা শীতল হাওয়া ভাসিয়ে নেয় অস্তিত্ব। অতঃপর বিশ্বাসে বক্র হাসি হেসে কেড়ে নিয়ে যায় বেঁচে থাকার সব উপকরণ।
আহ! এ যে কি জ্বালাময় চিত্ত বেদনার করুণ অধ্যায়।
হঠাৎ কি হলো! এক টানে শিরা উপশিরার সমস্ত বাঁধন দিলাম খুলে। গলগলিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো ভিতরের জমাট বাধা দুঃষিত লোহিত কনা! মুক্তির স্বাদ বুঝি এমনই প্রশান্তির হয়!
চিত্তে নানাপ্রকার তরঙ্গ আজ আত্মাকে আবৃত করে রেখেছে। আমি কেবল তরঙ্গগুলির ভিতরে আমার মৃত আত্মার কিঞ্চিৎ প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছি।
শুয়ে আছি সাদা কাপরে বহু অতৃপ্ত আত্মা বহনকারী পুরাতন কাঠের খাটিয়ায়! না হয় নিলাকাশ থেকে একটি তাঁরা আজ খশে পড়ল জমিনে কিংবা আকাশ ভেঙ্গে তারার দল ছুটে এসে লুটিয়ে পরলো অজানা কোন গ্রহে। কার কি আসে যায় তাতে!
প্রকৃতি তার চিরাচিরিত নিয়ম অনুযায়ীই নক্ষত্রের চলে যাওয়া মেনে নেবে। যেমনটি মেনে নিয়েছে ইন্দ্রনীল!
যেতে যেতে আরো একবার পিছনে ফিরে দেখা…নাহ! আজ কোন পিছুটান নেই আমার।

Add to favorites
787 views