আমার একা থাকা -
এইচ বি রিতা
Published on: জানুয়ারী 17, 2013
একা কে নয়? এই জগৎ সংসারে আমরা সবায় একা। রাতের বিশাল আকাশের ওই চাঁদটিও একা। দিন শেষে রাতটিও একা। সমুদ্রের গর্জণ শেষে নিথর ঢেউটি একা। বর্তমানের আবর্তনে অতীত একা। ডালে ডালে গুনগুন করে গান করা পাখীটি একা। প্রেম শেষে অশ্রু নয়নে ব্যর্থ প্রেমিক-প্রেমিকা একা। তিরিশটি বছর এক বিছানায় কাটিয়ে পাশ ফিরে ঘুমানো জুগল জোড়াও একা। একা কে নয়?
এ জীবনে অন্তত হাজার বার মনে হয়েছে একা থাকায় একটা আনন্দ আছে, তৃপ্তি আছে। ক’জন একা থাকতে পারে? প্রকৃতির কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে, এ নিয়মের বাহিরে যাওয়া কঠিন। প্রকৃতি মানুষকে একা থাকতে দেয়না। কোন না কোন ভাবে মায়ার বাধঁনে জড়িয়ে রাখে আমাদের। এ মায়াই আমাদের যত কষ্টের কারণ। এ মায়াই আমাদের ব্যস্ততার কারণ। যে মায়া ত্যাগ করতে পারলো না, সে সংসারের কোলাহলে ভিড়ে গেল। তার আর একা থাকা হলনা! মায়া আর বন্ধন গুলোকে সিন্দুকে বন্দি করেছি আজ বহু বছর। চাবি কোথায় ছুঁড়ে ফেলেছি মনে পড়েনা। এখন চাইলেও আর সিন্দুক খোলা হয়না।
এসেছি একা, যাবো একা। সঙ্গে যাবে আমার নিঃসঙ্গতা আর যাবে কিছু সাধনার ফসল, দুর্লভ সঞ্চয়। কোলাহলে থেকে অর্জন হয়না, বর্জন ছাড়া। ঘর সংসার সব মিছে মায়া একটা চুক্তি মাত্র। প্রকৃতির নিয়মে চুক্তি বাঁধা। দিন-রাতের আলো- আধাঁরে চুক্তি, জীবনের প্রতি ধাপে ধাপে চুক্তি। তোমার সাথে আমার বেঁচে থাকায় চুক্তি; সম্পর্কে সম্পর্কে ভালবাসার চুক্তি। পরপারে সুখে-দুঃখে থাকার চুক্তি, সৃষ্টিকর্তার সাথে সাক্ষাতের চুক্তি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চুক্তি। এত বেড়াজাল ভালো লাগেনা! এত কোলাহল ভাল লাগেনা! চুক্তিতে সাক্ষর করে করে আংগুলে ক্ষত হয়ে গেল। এবার একলা থাকার পালা।
মাঝে মাঝে মাঝরাতে চোখ মেলে বড্ড বিষন্ন লাগে! জ্বানালার পর্দার ফাঁকে ঘরে ঢোকা এক ফালি পঞ্চমীর চাঁদ এর আলো চোখে ভীষণ জ্বালা ধরায়। আত্মার গভীরে ঘুমিয়ে থাকা নির্লিপ্ত সমঝোতা টের পাই। ভালো লাগেনা জেগে উঠা; মৃদুপায়ে পোকা মাকরের হেটে বেড়ানো ও কানে হুংকার তুলে গর্জে উঠে! নাগরিক নৈশব্দের একলা রাতে, আমার একলা মনের একলা ঘরে নরম পায়ে হেটে বেড়াই। ভাল লাগে। আমি ভালো আছি।

Add to favorites
5,479 views