ক্যান্ডেল-লাইট ডিনার -
আসাদুজ্জামান শাওন
Published on: অক্টোবর 11, 2015
ক্যান্ডেল-লাইট ডিনার
আসাদুজ্জামান শাওন
——————————
তোমার আর আমার একটা দো’তলা ঘর,
দো’তলা ঘরের উপরের ঐ ছাদ,
ছাদের উপরের ঐ দূর আকাশ।
আকাশের নিচে বন্দী,
তোমার আর আমার কয়েক’টা দিনের দীর্ঘশ্বাস।
আর ইট-সিমেন্টে বন্দী,
তোমার আর আমার হাতে-গড়া,
মিথ্যে লাল-নীল সংসার।
আজ অনেকদিন পরে ছাদটাতে এসে দাঁড়ালাম!
মহাকাল;
তুমি হারিয়ে যাওয়ার পর আর ছাদে আসা হয়না আমার।
তবে জানিনা,
আজ কেন জানি তোমার কথা মনে পড়লো
নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না।
তাকিয়ে রইলাম এক দৃষ্টিতে ঐ দূর আকাশটার দিকে!
অনেক পুরানো কথা আজ কেন জানি মনে পড়ছে,
আমার এই অবচেতন মনে,
আর শুধু তোমাকে আর তোমার হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলোকে।
যেন আজও ক্রমশ বন্দী হয়ে আছি,
তোমারই স্মৃতি দিয়ে গড়া বন্দী-কারাগারে।
চোখটা আজ অসময়ে কেন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে,
সবকিছু কেন যেন ঘোলাটে লাগছে;
যেন অনেকটা অদ্ভুদ আর রংহীন।
ছাদটার অদূরে পড়ে আছে একটা টেবিল আর দুইটা চেয়ার।
যেন হাজারটা ব্যথার ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
পরাজিত সৈনিকের বেশে।
এটা সেই ছাদ মহাকাল!
আর ঐ অদূরে পড়ে থাকা সেই টেবিল-চেয়ার।
যেখানে আজও……
তোমার আর আমার ক্যান্ডেল-লাইট ডিনারের,
দুঃসহ স্মৃতিগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে।
এটা সেই ছাদ মহাকাল!
যেখানে আজও……
পড়ে আছে তোমার আর আমার লেপটে থাকা,হাজারটা রঙের মলিন স্মৃতি।
আঁধারের নির্জনতায় যেন তোমার আর আমার মলিন স্মৃতিগুলো,
আর্তনাদ করে,করে হাহাকার!
যা শুধু আজ ইতিহাস আর রংচটা অতীত।
মনে পড়ে……
চাঁদের আলো আর কোটি তারা দিয়ে সাজানো একটি রাতের আকাশ।
টেবিলের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা-
একটি মোমদানী,আর তাতে সাজানো কয়েক’টি মোম,
যেন একেকটা বছরের দন্ডায়মান একেক’টা স্মৃতি।
একটি ফুলদানী,তাতে গোলাপ আর রজনীগন্ধার সাজানো মিথ্যে প্রণয়,
যেন একেক’টা বছরের কাছে আসার অভিনয়ের গল্প।
কয়েক’টি প্লেট আর গ্লাসের সাজানো সংসার,
আর প্লেটে সাজানো তোমার আর আমার প্রিয় খাবার।
আর একটা তোমার আর আমার প্রিয়,
লাল রঙের বিলাসের জলের স্বচ্ছ কাঁচের বোতল।
যেন সাজানো একটা টেবিল,
একটা ক্যান্ডেল-লাইট ডিনার।
টেবিলের দুইপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দুইটা চেয়ার,
যার একপ্রান্তে আমি আর অন্য প্রান্তে তুমি।
এরপর তোমার জন্য অপেক্ষা!
অতঃপর সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে তোমার আগমন,
নূপুরের মৃদু শব্দ সংকেত দিচ্ছে হয়ত তুমি আসছো।
মনে পড়ে……
তুমি যখন ভালোবাসার আবেশে ঠিক পিছনের দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরতে,
আর আলতো করে বলতে ভালোবাসি।
তারপর অপর প্রান্তের চেয়ারটাতে বসে হাতটা ধরতে,
অতঃপর দু’জন-দু’জনার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম যেন অনন্তকাল।
তারপর কয়েক’টা মিথ্যে প্রতিশ্রুতির বাণী,
অতঃপর তোমার আর আমার ক্যান্ডেল-লাইট ডিনার।
অতঃপর লাল বিলাসের জলে,
মলিন গাঢ় ভালোবাসা।
অদূরে গ্রামোফোনের পড়ে থাকা মৃদু সংগীত,
যেন একটা মাতাল পরিবেশ।
তারপর তোমার আর আমার;
চোখে-চোখে বন্দী হওয়ার প্রতিযোগিতা,
তারপর হাতে-হাত,
যেন তোমার ঐ হাতের শিরা-উপশিরার সাথে আমার হাতের শিরা-উপশিরার অভিনয়ের অভিশপ্ত সহবাস।
তারপর স্বচ্ছ এক ভালোবাসার রংচটা নৃত্য!
তারপর……
তোমার একটা মলিন আবদার!
গীটারের সপ্ত সুরের ঢেউয়ে হারিয়ে যাওয়ার তীব্র বায়না।
অতঃপর আকাশ দেখা,
সাথে জ্যোৎসনা-বিলাস।
আর কোটি তারাদের অদ্ভুদ তৈলচিত্র!
আজ অনেকদিন পর তোমাকে মনে পড়লো……
আকাশ,ছাদ,
টেবিল-চেয়ার সবই আছে;
শুধু মানুষটাই হারিয়ে গেছে কালের বির্বতনে!
যেন বন্দী হয়ে পড়ে আছে কোনও রংচটা ইতিহাসের অন্ধকার কারাগারে।
মহাকাল……
রাতের আঁধারের চাদর হয়ে না পারো,
ভোরের সূর্য হয়ে না হয় এসো,
ভিজিয়ে দিয়ো না হয় পুরো শরীর।
রোদ হয়ে না হয় পরশ বুলিয়ে দিয়ো,
দিয়ো না হয় একটু তোমার মলিন স্পর্শ।
আমি আজও ছাদটাতে দাঁড়িয়ে থাকি!
হয়তো তুমি শিশিরে ভেজা সর্পিল পথ পেরিয়ে,
আছড়ে পড়বে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতন আমারই বুকের বেলাভূমিতে।
আজও অপেক্ষায় থাকি……
শুধু তোমারই পথ পানের দিকে তাকিয়ে তোমারই আশায়!
অপেক্ষায় থাকি একটা ক্যান্ডেল-লাইট ডিনারের।

Add to favorites
2,163 views