চলে গেলো মৌ -
এইচ বি রিতা
Published on: জুন 9, 2019
১৯৯৩তে সুদানের দুর্ভিক্ষের সময় সাউথ আফ্রিকার ফটোজার্নালিস্ট কেভিন কার্টার একটি ছবি তুলেছিলেন। ছবিটিতে দেখা যায় একজন কঙ্কালসার ক্ষুদার্থ বাচ্চা মেয়ে খাবারের খোঁজে একটু দূরে অবস্থিত খাদ্য- গুদামের দিকে যাবার চেষ্টা করছে। ক্ষুদায় মেয়েটির নড়ার জোড় নেই বলে মাঝ পথে বসে পড়ে। দূরে দাঁড়িয়ে একটি শকুন অপেক্ষা করছে বাচ্চাটির মৃত্যুর জন্য। বাচ্চাটি মারা গেলেই শকুনটি তাকে দিয়ে নিজের ক্ষুদা মিটাবে। এই ছবিটির জন্য কার্টার ‘পুলিৎজার’ পুরষ্কার পান।
কার্টার এর প্রফেশনালিজম এর কারনে, তার দায়ীত্বটাই এমন ছিল যে, ছবি তুলে সেখান থেকে চলে আসতে হবে। তাই, ছবি তুলেই কার্টার সেখান থেকে চলে আসেন। বাচ্চাটির শেষ পরিনতি কি হয়েছিল, তা কার্টার এর আর জানা হয়নি।
ছবিটি তুলার প্রায় ৩ মাস পর, মাত্র ৩০ বছর বয়সে কার্টার সুইসাইট করেন। এই ছবিটি তোলার পর পরই তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরেন। তার সাফল্য, তার বিবেককে শান্ত করতে পারেনি । বাচ্চাটিকে সাহায্য করতে না পারার অনুশোচনায়, কার্টার মানসিক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন যার পরিনাম হয় ”আত্মহত্যা।”
মানবতা এমন একটি বিষয়, এমন একটি আবেগশীল অনুভুতি যে, যার ভিতর এই মানবতা জাগে, তার সমস্ত অস্তিত্ব এবং স্বত্বা নাড়া দিয়ে যায়।
আমার মনে হয়েছিন লিউপাসে আক্রান্ত মোসুমী আক্তার মৌ’কে বাঁচানো দরকার। আমরা দু’জনেই প্রায় একই রকম রোগে আক্রান্ত। আমার মা রাগ করেছিলেন। বলেছিলেন, নিজের শরীরের অবস্থা এত খারাপ, ব্রেইনটাকে বিশ্রাম দে। নিজেকে আগে বাঁচা।’
আমি বলেছিলাম, ‘ মা। মৌকে বাঁচানো দরকার। উন্নত দেশের এত উন্নত চিকিৎসার পরও কত যন্ত্রণা ভোগ করছি, সেরে উঠিনি এখনো। কবে ভাল হবো তাও অনিশ্চিত। আর বাংলাদেশের অনুন্নত চিকিৎসায় সে কিভাবে বাঁচবে? মেয়েটিকে বাঁচানো দরকার! হয়তো তার ওছিলায় আল্লাহ্ আমার যন্ত্রণা কমিযে দিবেন।’
আমি পারিনি। চেষ্টা করেছি। মেযেটি মরে গেল।
আমার আশ পাশের মানুষগুলো অনেকেই যদি সময় মত সামান্য কিছু নিয়ে
এগিয়ে আসতো, যদি সময়মত তাকে ইন্ডিয়া পাঠাতে পারতাম, তবে সে হয়তো আজ বেঁচে থাকতো।
সামান্য ৫/১০/১০০/৫০০ টাকা দিয়ে কারো জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করার জন্য খুব বেশী অর্থকষ্টে পড়তে হয়না বা কারো পকেটে টান পরেনা। এর জন্য যা দরকার, তা হলো ইচ্ছাশক্তি।
যে নেলসন ম্যান্ডেলা কে চিনেনা, দাসপ্রথা মুক্তির উজ্জ্বল নক্ষত্র সিভিল রাইটস এক্টিভিস্ট মার্টিন লুথার কিং এর ইতিহাস জানেনা, ক্ষুদার্থের পৈশাচিক ছবি তুলে সাড়া জাগানো ফটোজার্নানিস্ট কেভিন কার্টার এর আত্যহত্যার করুন রহস্য যে জানার প্রয়োজনবোধ করেনা, ভ্যাক্লার হাভেল, ম্যারী ওলস্টোনক্রেফট এর মতো মানবধীকার প্রতিষ্টার প্রতিক ও ফেমিনিস্ট এর জীবনি যে পড়ে দেখেনী কখনো, রোজা পার্ক এর মত নিজের অধীকার আদায় করে নেয়ার মনোবল যার মধ্যে নেই, অন্ধ ও বধীরদের অধীকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ে যাওয়া হেলেন কিলার এর জন্ম বৃত্তান্ত যে জানেনা, দারিদ্রতা মোচনে ও নারী শিক্ষায় মুসলিম নারীদের সম অধীকার প্রতিষ্ঠায়, পাকিস্তানের মুসলিম নারী আসমা জাহাঙীর ইতিহাস যে জানেনা, তার মাঝে মানবতাবোধ জাগ্রত না হওয়ারই কথা!
এই অনুশোচনা, প্রায়শ্চিত্তবোধ আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে জানিনা……

Add to favorites
1,612 views