জঙ্গিবাদে নারী -
এইচ বি রিতা
Published on: ডিসেম্বর 28, 2016
আশকোনা জঙ্গি অভিযানের পর, ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সংবাদ সন্মেলনে বলেছেন, আত্মঘাতী শাকিরা যখন বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় হলো, শাকিরার ময়নাতদন্তে তার শরীরে কোন গুলি পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তে তথ্যমতে, বোমার আঘাতে শাকিরার মৃত্যু হয়েছে।
শাকিরার শরীরে গুলি কেন পাওয়া যায়নি, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলি হয়তো সাকিরার শরীরে ঢুকে বের হয়ে গিয়েছিল। ____ (হাস্যকর)
অনেকেই বলছেন, স্বামীর প্ররোচনায় নারীরা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছেন। তবে সবক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিক কিনা, তাতে সন্দেহ থেকে যায়। যে নারীর সন্তান রয়েছে, সে নারী সন্তানের মমতায় হলেও স্বামীর এমন ভয়ংকর প্ররোচনায় সামিল হবেননা। যারা হচ্ছেন, তারা বুঝেই হচ্ছেন।
আশকোনার বিষয়টি আসলে কি, কিংবা জঙ্গিবাদে নারীর জড়িয়ে পরার বিষয়টিতে পরিবার প্রধানের সম্পৃক্ততা কতটুকু, তা বিবেচনা সাপেক্ষ। অনেকেই নারী জঙ্গিবাদের বিষয়টি বানোয়াট ভাবছেন, তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট বলে ভিন্ন কথা। বর্তমানে জঙ্গিবাদে নারীর পদার্পন খুব সুস্পষ্ট এবং ভালন্যারাবল।
অতীতেও আমরা দেখেছি, ঢাকার ধানমন্ডির একজন চিকিৎসকের অবিবাহিত কন্যা নিজে উদ্বুদ্ধ হয়ে আইএস এ যোগ দেয়ার জন্য দেশও ছেড়েছিলেন। পরে তুরস্ক থেকে তাকে ফেরত আনা হয়েছে। এ বছর অগাস্টে ঢাকা ও গাজিপুর থেকে গ্রেফতারকৃত ৪ নারী জঙ্গি যথাক্রমে আকলিমা রহমান মনি, ইসতিসনা আক্তার ঐশী, খাদিজা পারভীন মেঘলা ও ইশরাত জাহান মৌসুমী ওরফে মৌ। তাদের মধ্যে একজন হলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক-ইসতিসনা আক্তার ঐশী। ঐশীর মা-বাবা দুজনেই ডাক্তার। ওরা সজ্ঞানী ও শিক্ষিত, ওরা অবিবাহীতা ছিলেন। তাদের বাধ্য করেছিল কে?
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মাস্টারমাইন্ড জঙ্গিদের প্রায় সকলের বউ-বাচ্চাই তাদের স্বামীদের কার্যক্রমে জড়িত। আশকোনা অভিযানে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছে মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার (শীলা) ও তাঁদের সাত বছরের মেয়ে এবং আত্মসমর্পণকারী অন্য নারী হলেন পলাতক ‘জঙ্গি’ মঈনুল ওরফে মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা। তাঁর সঙ্গে ও রয়েছে চার মাসের একটি মেয়ে। আজিমপুরে নিহত ‘জঙ্গি’ তানভীর কাদরীর যমজ দুই ছেলের একজন আফিফ ক্বাদরী, যে অভিযানের সময় মারা যায়। আফিফের ভাই তাহরীম কাদরী ও মা আবেদাতুন ফাতেমা আজিমপুরে গ্রেপ্তার হন। এখন কারাগারে।
আরে যেসব নারীরা তাদের স্বামীদের পাশাপাশি সাপোর্টিভ রোল পালন করছেন, তারা হলেন, গুলশান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফজান ওরফে প্রিয়তি এবং জঙ্গি বাশারুল্লাহ ওরফে চকলেট রাহুলের স্ত্রী শায়লা আফরিন আফরা।
আশকোনায় আত্মঘাতী নারীর নাম শাকিরা। তিনি গত অক্টোবরে তেজগাঁও এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া জেএমবির সদস্য রাশেদুর রহমান ওরফে সুমনের স্ত্রী বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছেন। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাথের শিশু সন্তানটি তার নিজের মায়ের নাম শাকিরা জানালেও, বাবার নাম ইকবাল বলে জানিয়েছে। এখানেও রহস্যের জাল খুলছেনা। প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৩ মার্চ কুমিল্লায় এমনই এক জঙ্গি আস্তানায় রেবের অভিযানের সময় জেএমবির মোল্লা ওমরের স্ত্রী সাইদা নাঈম সুমাইয়া তাঁর দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। শাকিরাই প্রথম নন।
কারণ যাই হোক, স্বামীর প্ররোচনা বা স্বইচ্ছা, জঙ্গিবাদে নারীর পদার্পন সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় সর্বক্ষেত্রেই বিরাট অরাজকতার সৃষ্টি করবে। একজন পুরুষকে যতটা সহজে ট্রেইস করা যায়, বোরকা পরিহীতা নারীকে সেভাবে ট্রেইস করা যায়না। চাইলেই সন্দেহজনক কোন নারীকে পথে দাড় করিয়ে পুরুষের মত বিভ্রান্ত করা যায়না। আর সে সুযোগে নারীকে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ দেশের সর্বত্র তাদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার সুযোগ পাবে।
আমার অস্বস্তি আবার ভিন্ন ইস্যূ নিয়ে। আমাদের রাষ্ট্রীয় ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান সম্পর্কে সবার নিশ্চয় কম বেশী ধারণা রয়েছে। জঙ্গিবাদী উগ্রতা কমাতে কিছুদিন পূর্বে যেমন আমাদের তারানা ম্যাডাম দেশের সকল ইন্টারনেট অফ করে দিয়েছিলেন, এবার হয়তো জঙ্গিবাদ দমাতে দেশের সকল নারীর জন্য পর্দা প্রথাকে আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে কার্যকর করতে পারেন।
মাথা ব্যথা তো ঘার হতে মাথা কেটে দাও! ব্যাস!
আল্লাহ! আমাদের সৎবুদ্ধি দান করুন! হেফাজত করুন। আমিন।
—–ডার্ক এভিল (HB Rita)

Add to favorites
1,019 views