জীবন যেখানে যেমন -
এইচ বি রিতা
Published on: সেপ্টেম্বর 10, 2013
সিগারেট এর ধোঁয়াটা ছাদ মুখো ফু দিয়ে ছেড়েই এক রাশ বিরক্তি আমায় চেপে বসল। এই নিয়ে পর পর নয়টা সিগারেট শেষ হল। জিহবাটা তেতো হয়ে আছে। ঘরটা কোয়াশাচ্ছন্ন ভোরের মত ঘোলাটে হয়ে গেছে। মা কয়েক বার দরজায় কাড়া নেড়ে গেছেন। আমি মটকা মেরে না শুনার ভান করে পরে ছিলাম। যদিও মা দরজার নিচ নিয়ে সিগারেট এর গন্ধ ঠিকই টের পেয়েছেন। আমার মা… এক বিশাল ঐতিহাসিক মহিলা। তিনি মনে করেন তিনি এই জগতের সব চেয়ে দুঃখিনী মা। তার ঘরে জলজ্যান্ত এক কচ্ছপ পুষছেন তিনি দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে, যার কাজই হচ্ছে ধীর গতিতে চলা, মাথাটা বাড়িয়ে খাবার খেয়ে আবার
সময় মত মাথাটা শরীরে ডুকিয়ে ফেলা। দিন রাত উনার মহান বানীতে ধমনী কেপে উঠে। শরীরের চামরা তোষকের মত ভারী বলে উনার কোন বানীই আমার গায়ে লাগেনা।
যাই হোক, সকালের প্রথম মল ত্যাগ করার ভিষণ তাড়া অনুভব করছি। এক প্রকার জোর করেই উঠে দাড়ালাম। স্যান্ডেলটা পায়ে দিয়ে দরজা খুলতেই মা এর মুখোমুখি। মা এর চোখে চোখ পড়তেই ঘুমে ঢলে পরার ভান করতে করতে বাথরুম দিকে ছুটলাম।
দরজায় কড়া নাড়তেই বাবা সিংহের মত গর্জে উঠলেন। তড়িগড়ি ভাগলাম। প্রয়োজনে বাঘের মুখে সইচ্ছায় নিজেকে বিসর্জন দিতে রাজী, বাবার মুখোমুখী হতে আপত্তি আছে। পেট চেপে ফিরে এলাম ঘরে।
দরজাটা ভিরিয়ে আবার শুয়ে পরলাম। ভাবছি, বন্নিকে কিভাবে বলি যে চাকরিটা চলে গেছে। বস এর ঘ্যানর ঘ্যানর অসহ্য লাগে। বন্নিকে কে বুঝায়! চাকরি ছেড়ে দিয়েছি শুনা মাত্রই ও
হুলস্থুল কান্ড করবে। ঝড় যে অঞ্চলেই হোক, বজ্রপাত সময় মত আমার ঘরের চালাতেই পড়ে!
পেট এ এবার রীতিমত যন্ত্রনা শুরু হয়ে গেছে। একবার দেখে আসবো কি বাবার হয়েছে কিনা!
নাহ! আরেকটু পর যাই। আয়েশ করে খাটে পা উঠিয়ে বসে, আরেকটি সিগারেট ধরালাম।
এমন সময় দরজার পাশে ময়নার মা “ভাইজান চা ” বলে চেঁচিয়ে উঠল।
দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই নাক চেপে ধরল ময়নার মা।
-কি হল? ”
– ভাইজান যে কি ছাতা মাতা খান ”
এই বলেই চা টা নামিয়ে রাখল সাইড টেবিল এ।
-ময়নার মা…
ময়নার মা চলে যেতে গিয়েও ফিরে তাকালো।
-জি ভাইজান
-আমার শার্টটা ধুয়া দরকার।
– জি ভাইজান
বলেই দলামুচরা শার্টটা খাটের উপর থেকে হাতে নিল ময়নার মা।
– ভাইজান, একটা নতুন শার্ট কিনেন। ধুইতে ধুইতে তো আফনার শার্ট ছিড়া যাইতাসে।
বলেই ময়নার মা চলে গেল।
হুম। একটা নতুন শার্ট কিনতে হবে। একি শার্ট পরে কতবার যে বন্নির বিরক্ত মুখ দেখেছি। বহু বছর ধরে কামাই করা সারটিফিকেট এর নামে পুড়োণো কাগজ পত্রগুলো যদি কাজে লাগাতে পারি এবার, তবে একটা নতুন শার্ট কিনবো। বাবার পুরানো চশমাটা বদলে, নতুন একটা চশমা কিনে দেবো। বন্নিকে ঘরে তুলবো। একটা ভাল চাকরি চাই বন্নিকে পেতে। বন্নিকে পেতে ভালবাসার চেয়ে চাকরিটাই এখন বেশী দরকার । সল্প বেতন পাওয়া ছেলের হাতে মেয়ে দিতে রাজি নন হবু শশুর মসাই।
অর্থ বিত্তের কাছে আমার মত ভবঘুরেরা কত অসহায়! আচ্ছা.. .
ভালবাসার পরিমাপ কি একটা ভাল চাকরি দিয়ে করা যায়? সবাই কেন একি নিয়মে কোট-টাই পরে অফিস এ যাবে বা বড় মাপের ব্যাবসায়ী হবে! একি নিয়মে কি পৃথিবী ঘুরছে? ৩৬৫
দিনে কি হামেশাই বছর হয়! প্রতি চার বছর পর পর লিপ ইয়ার এসে পৃথিবীর নিয়ম কি ভেঙে দিচ্ছে না?
তাহলে কি ক্ষমতার লড়াই সর্বত্র ? কি জানি! হয়তো!
মোবাইল টা ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে উঠলো। বন্নির কল।
সাইলেন্ট মুড এ ফোনটা রেখে দিলাম উপুড় করে। এই মুহূর্তে, বন্নি মুখ্য নয়। শরীরের আবর্জনা গুলো ছুঁড়ে ফেলাই মুখ্য বিষয়।
উফফ! এবার বাথরুমে না গেলেই নয়।

Add to favorites
1,893 views