দক্ষতায় হংসগামিনী নক্ষত্রলোকে কল্যানকর কর্ম বপনে ব্যগ্র -
এইচ বি রিতা
Published on: ডিসেম্বর 4, 2017
পৃথিবীর ঘূর্ণয়নে রোজ ভোরে পূর্ব আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে সূর্য্য বেড়িয়ে আসে। সে আভায় পৃথিবী আলোকিত হয়। আবার সন্ধ্যার মুখে নিত্যকার নিয়মে পৃথিবীকে আঁধারে ঢেকে সূর্য্য বিদায় নেয়। বিমর্ষ গোধূলীলগ্নে মনে হয় আর বুঝি আলো দেখা হবেনা। কিন্তু চিরসত্য যা, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। যেতে যেতে সূর্য্যরশ্মি পৃথিবীকে জানান দিয়ে যায়, আমি শেষ হয়ে যাইনি, আমি চিরযৌবনা।
পৃথিবীর ঘূর্ণয়ের সাথে মানুষও যে যেদিকে পারে ছুটছে। স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেই আশাহত মানুষ ধরে নেয় কাল বলে কিছু নেই। ধারণার সাথে দৃষ্টির প্রখরতার যদি সমন্বয় থেকে, তবে নতুন রুপে কাল আবির্ভাব ঘটাবেই। যেখানেই শেষ, সেখানেই শুরু। শুরুর শেষটা যদি হয় তিক্ততায় পূর্ণ, তবে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুন শুরুর সূচনা হোক। যে কন্টকময় পথে চলতে গিয়ে গন্তব্যে পৌছাতে রক্তাক্ত পায়ে ব্যথার আবির্ভাব হয়, কাল না হয় ভিন্ন পথে রওনা হলাম! গন্তব্য যদি নির্ধারিত হয়, তবে পথের শেষ নেই, ভিন্নতার শেষ নেই।
মার্টিন লুথার বলেছিলেন, “যদি গন্তব্যে পৌছাতে দৌড়তে না পারো, তবে হাঁটো। যদি হাঁটতে না পারো, তবে হামাগুড়ি দাও। গন্তব্য
ঠিক থাকলে, যে কোন উপায়েই হোক তুমি সেখানে পৌছাবেই।”
আজ প্রাপ্তীর পূর্ণতা পেতেই হবে এমন নয়। আজ না পেলাম, সম্ভাবনাময় কাল তো আছে। কাল হলনা, পরশু বাকি রয়ে গেছে। সারল্যকে জীবনের মৌলিক অধীকার মানলে বিপত্তি পোহাতেই হবে। জীবন কন্টকময়, জীবন বিষাদময়; আবার জীবন বড় আনন্দময়-স্বাচ্ছন্দেরও। পৃথিবীর ঘূর্ণয়নে যেমন আলোর পরে আঁধার, আঁধারের পর আলো ফিরে আসে, তেমনি দুঃখশ্লোকের পর সুখ, সুখের পর দুঃখ পালাক্রমে আসবেই। এটাই পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য। সৃষ্টির এই রহস্য উপেক্ষা করা যায়না।
জীবন কখনো আমাদের সাথে সন্ধিতে আসেনা। জীবনের সাথে আমাদের সন্ধিচুক্তি করতে হয়। আমরা যদি একটি পানি ভর্তি পাত্রে একটি ডিম, একটি আলু ও কিছু কফিদানা ছেড়ে দিয়ে তাপে দেই, তবে কিছুক্ষন পর দেখা যাবে শক্ত খোসাযুক্ত তরল ডিম তাপে শক্ত হয়ে গেছে, নরম চামরার শক্ত আলুটি তাপে নরম হয়ে গেছে, এবং কফিদানা তাপে গলে গিয়ে পুরো পানির রংটাই বদলে দিয়েছে। প্রতিকূলতা জীবনের চিরন্তন সত্য অধ্যায়। প্রতিকূলতা আসবেই। সেটাকে আমরা কিভাবে নেব, ডিম, আলু না কফিদানা হয়ে; তা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও সমঝোতার উপর নির্ভর করে।
স্বপ্ন ভাঙ্গার ব্যর্থতা আমার, তোমার, তারও। আমি অপ্রাপ্তিকেই মেলনে নিয়েছি এই ভেবে যে, প্রাপ্তির পূর্ণতা আসতেই হবে এমন নয়। আর মেনে নিয়েছি বলেই আমি আশাহত নই; আমি ভাল আছি। সেই একি অপ্রাপ্তির ব্যর্থতায় তুমি মুষড়ে পড়লে। ভেবে নিলে, বেঁচে থেকে লাভ কি প্রাপ্তির পূর্ণতা ব্যতীত? আবার সেই একই ব্যর্থতায় সে মেনেও নিলনা, মুষড়েও পড়লোনা। সে নব উদ্দ্যমে নতুন স্বপ্নের খুঁজে বের হল। সেও ভাল থাকবে। খারাপ যে থাকবে, সে- তুমি।
জীবন ডিকশনারী ভর্তি অসংখ্য শব্দাবলীতে। একই বর্ণে বহুবিধ শব্দ। যেমন-
“দ” তে দুঃখ
“দ” তে দক্ষতা
“হ” তে হতাশা
“হ” তে হংসগামিনী
“ন” তে নিরাশা
“ন” তে নক্ষত্র-লোক
ক” তে কলহ
“ক” তে কল্যানকর
“ব” তে ব্যর্থতা
“ব” তে বপন
দক্ষতায় হংসগামিনী নক্ষত্রলোকে কল্যানকর কর্ম বপনে ব্যগ্র……
জীবন থেকে প্রতিকূলতা পরিবর্তনে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন খুব জরুরী। দুঃখ-হতাশা, নিরাশা-ব্যর্থতা, কলহ ছেঁকে দক্ষতা-হংসগামিনী-নক্ষত্রলোক-কল্যানকর-বপনের মত অনুকূল শব্দাবলীকে বেঁছে নিতে হবে। তবেই বেঁচে থাকা আনন্দের হবে।

Add to favorites
1,059 views