দ্যা হিস্টোরি অফ আওয়ার বার্থ -
Ajmery
Published on: ডিসেম্বর 22, 2017
শুনুন, খানিক থামুন,এক জন্মের গল্প বলি
আমাদের গল্প,জীবনের গল্প যা অংকিত হয়েছিল এই রাজপথের ক্যানভাসে,
একটি জন্মের গল্প, যা আঁকা হয়েছিল বুকের তাজা রক্ত দিয়ে
আমাদের জন্মটা ঠিক কোন গল্প নয়,একটি ইতিহাস!
আমাদের জন্মটা যেদিন হয়েছিল সেদিন-
এক চোখে উজ্জ্বল হাসি ছিল অন্য চোখে অশ্রুধারা ছিল।
নয়মাস ধ্বংসলীলার পর আমরা জন্মেছি,
জন্মটা অনেক দামে কেনা!এতো সহজ ছিলনা।
রুপকথা নয় তার চেয়েও বেশি কিছু,মহাকাব্য হবে রচিত।
বায়ান্ন থেকে একাত্তর, শুধু রক্তই ঝরেছিল।
এইযে,এখান টায় বটের তলায় মনে আছে?এখানটায় রক্তেরছাপ ছিল সেদিন-
বায়ান্নে যখন ছাত্রনেতাদের উপর বুলেট চলে,
যখন তাদের কণ্ঠনালীকে বুটের আঘাতে স্তব্ধ করার চেষ্টা,
বেয়নটের খোঁচায় খোঁচায় মাংসপিণ্ড ছিন্নভিন্ন করা হয়েছিল,
তখনো তাঁদের চোখে ছিল প্রতিবাদের আগুন।
থু থু মেরেছিল হায়নাদের মুখে তবুও মাথা নোয়ায়নি!
সেদিন রক্তরঞ্জিত রাজপথে প্রথম রচিত হল আমাদের জন্মক্ষণ।
আমাদের ভাষা,প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া ভাষাতেই লিখা হলো জন্মকথন।
এখানেই যে শেষ নয়,এত দ্রুত আমরা জন্মাই নি!
দিনের আলো ফুটতে যে অনেক দেরি!
হায়ানাদের বিরুদ্ধে যখন আওয়াজ তুলেছিল হাজারো কণ্ঠধ্বনি,
তখন তাদের মনে ত্রাসের সৃষ্টি হলো,
কেড়ে নিল প্রিয় নেতা আসাদ, মতিউরের প্রাণ!
কেঁদেছিল সেদিন আগরতলা, মেনে নেয়নি ষড়যন্ত্র,
নগ্নপদে রাজপথে উজ্জীবিত প্রাণ, মিছিলে জোরালো কন্ঠে বর্ষিত হয়েছিল-
“জাগো-জাগো বাঙালি জাতি জাগো”
অতপঃর জাগ্রত বাঙালি রচিত করলো গণঅভ্যুত্থান।
না!না! রাক্ষসপাল এবারো খান্ত হয়নি,
ঘুটঘুটে আঁধারে মেতে উঠেছিল হত্যার উৎসবে,
হায়! আকাশে বাতাসে শুধু চিৎকার, লাশের পোড়া গন্ধ!
কত প্রাণ বিলীন হলো, দেশমাতা হলো নগ্ন তবুও ভিক্ষা চায় নি জানোয়ারদের কাছে,
বরং স্বামী সন্তান হারা জাহানারা ইমামের মতো বলে উঠেছিল-
“আমি ওদের দেখে নিব!”
আমাদের দাবাতেই শয়তানেরা নতুন দাবার চাল চালে,
মগজে বীজ বপন করে ধর্মান্ধতার,জন্ম নেয় নিজ দেশীয় শয়তান।
অঙ্কুরে বিনষ্ট করতেই উপড়ে ফেলে শিকড়,
নিজ দেশীয় ভাইদের বুকে গুলি চালিয়েছিল
মুনীর,কায়সারের মত বুদ্ধিদীপ্তকে করেছিল ক্ষত বিক্ষত, পুড়িয়ে ফেলেছি কতক স্বপ্ন!
বিধোবা করেছে পান্না কায়সার দেরকে,
যারা হাসি মুখে শোনা “ভালো থেকো ” শব্দটুকু নিয়ে ভালো আছেন আজও।
তাঁদের যে ভালো থাকতে হয়।
ছোট্ট সুমন আজও চোখের জলে ভাত খায়,
মা যে তার বলে গেছে “ভাত খেয়ে নিও, আমি আসবো।” আজও আসেন নি!
গলিত লাশের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলো আলোকিত কতক প্রাণ!
তাঁরা মরেন নি,তাঁদের যে মরণ নেই!
আমাদের নতুন জন্মে তাঁরা বেঁচে রবেন অনন্তকাল।
এত রক্তের বন্যাও পারেনি আমাদের জন্ম রুখতে!
বরং লাখো রক্তপিণ্ডের বিনিময়ে আমরা জন্মেছি।
লাশের স্তুপের মধ্য দিয়ে রক্তিম ভোরে আমরা জন্মেছি,
হ্যা, অবশেষে আমরা জন্মেছি, অনেক কিছু হারিয়ে জন্মেছি।
রচনাকাল –১৪-১২-২০১৭
বিদ্র:এখানে সুমন হচ্ছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীনের ছেলে।যখন আলবদররা তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিলেন তখন হাসিমুখে ৮বছরের ছেলেকে বলেছিলেন “ভাত খেয়ে নিও সুমন আমি যাবো আর আসবো”দোতলা থেকে রাজাকাররা তাঁকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিয়ে গিয়ে পরে হাত চোখ বেধে ফেলেছিল।রায়ের বাজারে তাঁর পরনের মোজা দেখে তাঁর লাশ চিহ্নিত করা হয়।
সকল শহীদের তরে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।শুভ বিজয় দিবস

Add to favorites
1,001 views