নঁখের আঁচরে মানচিত্র -
এইচ বি রিতা
Published on: মার্চ 29, 2019
মার্চের শেষের দিকটায় এখানের আবহাওয়া বেশ গা ঘেঁষা হয়ে উঠে
বরফ নেই, রৌদ্র-ছায়ার শীতল বাতাসে প্রাণ কাঁপিয়ে দেয়
পথের বাঁকে নিঃস্বঙ্গ একাকী শীর্ণ বৃক্ষগুলোতে দেখা যায় যৌবনের ফের আগমন
কলি মেলে বাহারী ফুল সবুজের অপেক্ষায় দোলে
চেরি উৎসবে পুরো শহর, দেশ, পৃথিবী
জানালার পাশে বসতেই মিশ্র সুরের ধ্বনি ভাসে বাতাসে
স্মৃতির টানাপোড়নে মানুষের ভিতর যে মানুষ আমি,
আচানক দৌড়ে আত্মার গভীরে ডুকে পড়ে
আমরা ছিলাম এক চাদরে জড়াজড়ি শীতের উষ্ণতার ভিতর
নবজাতক ইঁদুর ছানার মত
নেভাদার সত্তুর ফুট জল গভীরে সিক্ত সঞ্জীবনী সুধার সিঞ্চণে
হারপারস ফেরী ছেড়ে ফ্লোরিডা কিস
মার্চের রৌদ্রজ্জ্বল শীতল মাদকতা বিস্ময় টেনে দিত চোখে
ধুমকেতুর বিস্ফোরণে মহাকাশ কেঁদে উঠেছিল যেদিন
উল্কা ঝড়ে আকঙ্কিত তুমি দৌড়েছিলে বাড়ীর পথে
আমি বললাম, ভয় নেই ভয় নেই
ভয়কে গিলে খেয়েছি সেই জন্মের পর পরই
স্বৈরী পিতার মনোবাসনা অপূর্ণ করে টিকে আছি এতদিন
হাড়ের লড়াইয়ে দিনরাত কাবাডি খেলায়
দৈন্যতাকে ঠেসে দিয়েছি পুঁজিবাদী সমাজের মুখে
ভয় কি? আমি ভয়ের উর্ধ্বে বাস করা এক মুক্ত বিহঙ্গ।
মানব সম্প্রদায়ের দৃষ্টির অলক্ষে বেড়ে উঠে যা
তারও প্রাণ আছে, ধারণ আছে
তবু সে কোকিলের গান শুনতে পারেনা, জলরাশিকে ছুঁতে পারেনা
বারিসিক্ত ভুমিকে উপরে ফেলতে পারেনা
সূর্য্যকে হ্নদপিন্ডের গহীনে ধারণ করে স্বাধীনতার কথা বলতে পারেনা
মনে পড়ে, দাদীমা বলতেন
যে গান শুনেনা কবিতা বুঝেনা
যে ঝড়ের তান্ডব দমাতে বিদ্রোহ ঘোষনা করেনা
অভ্যূত্থানের জলোচ্ছ্বাস তাকে নতজানু করবেই
যে যুদ্ধ করতে জানেনা, সে আমৃত্যু ক্ষুধার্তই রয়ে যায়
যে দ্রোহ ছড়াতে জানেনা,
সে মধ্যাহ্নের প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত উষ্ণতাকে অনুভব করতে পারে কি?
তুমি জানো, আমি বিখ্যাত কেউ নই কিংবা কোন সেলিব্রেটি
পোড় খাওয়া জীবন আমার তবু বহমান
জলস্রোতের শব্দ কিংবা ঝিঁ ঝঁ পোকার আগমন আমাকে উল্লাসিত করেনা
আমি দেখি জীবনকে দূর পাহাড়ের চূড়ায় বসে
বিচার বিশ্লেষণে খুব যে পাকা, তাও বলবোনা
ব্যাতিক্রমী কিছু করে ফেলতে চাই, হবেও একদিন
কোন এক প্রভাতে তুলে নিয়ে আসবো এক মুঠো ঝড়া ফুল
তেল-জল মিশিয়ে সুগন্ধি ফিরাবো, পুতে দিব আবার মাটিতে
দেখাবো তোমাকে ভালবাসা কেমন করে প্রস্ফুটিত করে শীর্ণ পাতাকে।
কত কি ধারণ করে রাখি বুকে
শীতল বাতাস, রৌদ্রময় আকাশ, প্রিয় মৃত্তিকার বুক ফাঁটা হাহাকার
কুয়াশার চাদরে মোড়া আরশী নগর
সেখানে সমাধীত আমার বাহুবল পিতা
কত কি তাড়া করে ফিরে নিত্যদিন
একই বৃত্তের ভিতর ঘুরছি আমি, ঘুরছো তুমি
কি বিরক্তিকর!
পথে যেতে যেতে তাকিয়ে দেখি নিজ পদতল, অসহ্য লাগে
ক্ষিপ্রগতির বিজলীর মতন অগ্নিগর্ভ ধারণ করে
ইচ্ছে হয় আকাশে বাতাসে অভিশপ্ত নিঃশ্বাস ছুঁড়ে দেই
হুংকার ছেড়ে মুঠো ভরা দ্রোহ ছড়িয়ে দেই জমিনের বুকে
সেই দ্রোহে পোুড়ে খাক হোক সব
তোমাকে বলি শোন-
পর্বত শৃঙের মত দন্ডায়মান হয়ে নঁখের আঁচরে একদিন
আকাশনীলায় ঠিকই এঁকে দিব নতুন এক মানচিত্র।

Add to favorites
1,728 views