প্রতিচ্ছবি -
আসাদুজ্জামান শাওন
Published on: নভেম্বর 18, 2015
প্রতিচ্ছবি
আসাদুজ্জামান শাওন
——————————
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
প্রভাতে কোনও অপ্সরী
শিশির বিন্দু দিয়ে গড়া
জল নূপুর পড়ে,
শিশিরে ভেজা সর্পিল পথ পাড়ি দিয়ে,
অতঃপর,
কুয়াশায় আচ্ছন্ন অজানা রাজ্যে মিলিয়ে যায়।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
দিঘীর শান-বাধাঁনো ঘাটে
কোনও অপ্সরীর জলে পা ভিজিয়ে বসে থাকার,
কোনও কাল্পনিক রঙিন পোর্ট্রেইট।
অতঃপর অপ্সরীর জলে পা নাড়ানো দৃশ্য,
আর জল-কম্পন খেলার অদ্ভুদ সৃষ্টি।
তারপর,শরীরে রোদ মাখার অদ্ভুদ বাসনা!
আর অবাধ দস্যিপনা,
অতঃপর একরাশ শূন্যতায় ঢাকা বিষাদ।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোনও অপ্সরী হিজল গাছের তলে বসে,
আনমনে বকুল ফুলের মালা গাঁথে আপন মনে।
নিরালায় অশ্রু নিক্ষেপ করে অভিমানে,
আর পথ চেয়ে বসে থাকে,
বকুল ফুলের মালা নিয়ে
কোনও প্রিয় মানুষের আশায়!
অতঃপর বিচ্ছেদে বন্দী সাজানো স্বপ্ন।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোনও অপ্সরী নদীর তীরে বসে,
মায়াবী চোখ দিয়ে,
নীল আকাশের রঙিন পোর্ট্রেইট আঁকে।
অতঃপর,
একগুচ্ছ কাশফুল হাতে নিয়ে
মিলিয়ে যায়,
গো-ধূলী বেলার শেষ লগ্নের মতন।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোনও অপ্সরীর হিমেল হাওয়ায়,
ঢেউ খেলানো চুলের বিবর্ণ দৃশ্য।
অতঃপর এক চিলতে লাজুকতার হাসি,
তারপর সব অসাড় অনুভূতি।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোনও অপ্সরী রিক্সার হুড খুলে,
ব্যস্ত শহরের অলি-গলি পথ চিরে,
অতঃপর,
অজানা কোনও সভ্যতার আড়ালে মিলিয়ে যায়।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোনও অপ্সরী নীল রংয়ের শাড়ী পড়ে,
আমার পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকে।
অতঃপর,
অভিমানী চোখে আঘাত করে অগণিত।
তারপর,একরাশ দীর্ঘশ্বাসের আড়ালে বিলীন কয়েক’টা বছরের রং-হীন বর্ণের প্রেম।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোনও অপ্সরী বারান্দায় র্নিলিপ্তভাবে অশ্রু ভেজা চোখে,
তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।
অতঃপর,
ইট-পাথরে গড়া চিলেকোঠায় মিলিয়ে যায় অজানাতে।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোনও অপ্সরী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে,
মেঘ ছোঁয়ার বৃথা স্বপ্ন বুনে।
অতঃপর,
জানালার পর্দার আড়ালে মিলিয়ে যায় নীরবে।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোনও অপ্সরী সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে থাকে আনমনে,
নীরবে সমুদ্রের সপ্তসুরের মূর্ছনায় হারিয়ে যায় অদেখা স্বর্গে।
হাতে পড়ে থাকে কয়েক’টি কুড়িয়ে পাওয়া ঝিনুক,
আর চোখ থেকে ঝরে পড়া কয়েক’টা লোনা স্বপ্ন।
অতঃপর,
নীরবে ঝাউ বনের আড়ালে মিলিয়ে যায় সূর্য অস্তের মতন।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোনও অপ্সরী আমারই প্রিয় কৃষ্ণচূড়া ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকে,
আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।
অতঃপর,
হারিয়ে যায় অদূরে অজানা শর্তবাসে অনেকটা গোপনে।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোন অপ্সরী ঠিক আমার হাতটি ধরে,
করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
অতঃপর,
ধূলি-কণার মত মিলিয়ে যায় অদূরে।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
কোনও অপ্সরী মেহেদী রাঙা হাতে,
বিষাদের প্রতারণার আলপনা আঁকে।
অতঃপর,
বিষাদের নীল রং মেখে মিলিয়ে যায় অজানায়।
আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকি
যখন দেখি-
মাতাল হয়ে ঘরে ফেরার পথে,
কোনও অপ্সরী বীভৎস দৃষ্টিতে,
আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
অতঃপর,হারিয়ে যায় ঘুম ভাঙ্গা স্বপ্নের মতন।
আমার তোমার কথা মনে পড়ে মহাকাল!
শুধু তোমার কথা মনে পড়ে।
নিজেকে আর সামলাতে পারিনা,
পারিনা নিজের অশ্রুর সাথে যুদ্ধ করতে,
শ্রাবণের বারি ধারার মতন চোখ থেকে জল ঝরে পড়ে আমার।

Add to favorites
3,510 views