ভুল সমীকরণ -
এইচ বি রিতা
Published on: অক্টোবর 9, 2017
আমি তখন জীবনের ধূসর অন্ধকারে দাঁড়িয়ে
অপ্রতিরোধ্য স্নায়ু যুদ্ধে ভীষণ রকম বিধ্বস্ত
বিভ্রান্তিকর অভিযানে আলোর সন্ধানে শিকারী থেকে শিকার।
একদিন হেঁটে যাচ্ছিলাম আনমনে, উদ্দেশ্যহীন
পথিমধ্যে মিলে গেল এক সুদর্শন যুবক
পরিপাটি গোছানো পোশাক, পা খুঁড়িয়ে হাঁটছেন
আমায় দেখে হাসল, মনে হল চেনা কেউ
জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে?
“আমি এক সুখী মানুষ”
তবে যে পা খুঁড়িয়ে হাঁটছেন?
“পায়ে আমার অসুখ করেছে! অসুখী পা’টা কে কেঁটে ফেলেছি”
তবে যে বললেন আপনী সুখী মানুষ?
যুবক আবারো হাসল, বলল,
অসুখকে সরিয়ে দিলাম যে! হাঁটতে পারছি, এই তো সুখ!
মনে হল, মোহের আড়ালে এতদিন খুঁজেছি সুখের সংজ্ঞা।
অবাক বিস্ময়ে আরো কিছুদূর গেলাম
মনে হল কেউ পিছনে ডাকছেন!
ফিরে দেখলাম, জটাচুলে অর্ধনগ্ন কেউ
বললাম, কি চাই?
দুর্গন্ধ ছড়িয়ে লোকটি মৃত চোখে তাকালেন,
ভয়ংকর মাছের ন্যায় শীতল চোখ! আৎকে উঠলাম!
লোকটি কাছি ভিরতেই সরে গেলাম দু’কদম, বললাম,
কি চাই?
কিছু না বলে তিনি পাশের ডাস্টবিনে উপুর হয়ে পড়লেন
আমার বিস্ময় কাটেনা!
লোকটি ততক্ষনে পলিথিন ঘেঁটে কিছু মুখে পুড়লেন।
যেনে গেলাম, গোটা পৃথিবী অসুখে ভরা!
অতপর হেঁটে গেলাম আরো কিছুদূর
রাস্তার পাশে তখন বসে ছিল ঘোমটা টানা এক মেয়ে, পাশে তার মা
আমাকে দেখেই আকুল হয়ে ডাকলেন, বললেন,
“কয়টা টাকা দেন মা! আজ দুইদিন কিছু খাইনি”
নিদারুন সহমর্মিতায় তাকালাম মেয়েটির দিকে
মুখের একাংশ যেখানটায় ঢাকা, সেখানটায় পোড়া দগদগে ঘা
জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে ওর?
অশ্রু বিসর্জিত মা জানালেন,
ধর্ষন শেষে এসিড ছুড়া হয়েছিল তার মুখে!
বুঝে নিলাম, উড়ন্ত মেঘে আজ শকুনের মেলা!
মনের আকাশ থেকে কুয়াশা ভেজা মেঘ সরিয়ে
ঘুরে দাঁড়ালাম বাড়ীর পথে,
সুখের খোঁজে ভুলেই গিয়েছিলাম গোটা পৃথিবী অসুখে ভরা
নিশ্চিন্ত জীবন, তবু
ক্ষুদ্র আঘাতে বিচার বহির্ভূত আহ্লাদী মন কেঁদে উঠে যখন তখন।
আমরা দেখি কেবল সুখের ঘরে কান্নার মেঘ
মেঘ শেষে বর্ষণে ভিজে যাওয়া স্যাঁতস্যাঁতে জমিন কে দেখেছে!
অতপর, ক্ষমা প্রার্থনায় নতজানু হয়ে
স্রষ্টাকে আরো একবার কৃতজ্ঞতা জানালাম।

Add to favorites
855 views