শীতের আমেজ -
এইচ বি রিতা
Published on: জানুয়ারী 26, 2017
ভোরের কাঁচা রোদে কূয়াশার চাদর মুড়ে
ঘুম ঘুম আলসে বালিকা শিশির ভেজা কচি ঘাসে ঢেলে দেয় মায়াবী রোদ,
প্রভাতী হাওয়ায় সরিষার সুঘ্রাণ, হলদে চাদরে রঙ্গিন কারুকাজ
প্রজাপতি উড়ে যায় মটরশুঁটি ডালে
যেখানে জলমোতি টুপ করে খশে পরে জমিনে।
বাহারী ফুলের সৌরভে আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠে ডালিয়া, গাঁধা, কৃষ্ণকলি
আলসে বালিকার বুক জুড়ে কষ্টনীলায়
হলুদ-গোলাপী সুখ বার্তা নিয়ে উকি দেয় দশবাইচন্ডী।
এমনি পৌষের মিষ্টি রোদে জলেভাসা চরে জলকেলিতে অতিথী পাখি, ডুবচরে পাতিহাস, ডাহুক বকেদের সারি
মাছ ধরার ছলে হাঁটুজলে গ্রামের দূরন্ত কিশোর কিশোরী;
আহা! এ যেন আলসে বালিকার নতুন রুপ; শুভ্রতায় জলের বুকে প্রকৃতির বহুরুপ।
এমনি চাদরে ঢাকা প্রাতে কিষানী বৌ ঘোমটা টানে
উঠোন কোণে জ্বলন্ত উনুন, আতপচালের ভাঁজে খেঁজুর গুড়-নারিকেল কোরা
কতক ঘুম ঘুম চোখ উনুনে হাত পেতে উষ্ণতায় আলস্য কাটায়
ধোঁয়া উঠা ভাপা, চিতুই, কুলি, পুলি নানান স্বাদের বাহারী পিঠায় উদরপূর্তি,
খেঁজুর গাছের আগায় ঝুলে রসের হাড়ি;
হেমন্তের নবান্ন শেষে শিরীষের পাতা ঝড়া শীত; মমতায় বেঁধে দেয় গ্রাম বাংলার সকাল।
শীতের কনকনে আমেজ; সোনালী ধানের সোনালী আভায় কৃষকের মনে লাগে দোল
গায়ের বধূ উঠোনে শুকায় সদ্য তোলা আমন ধান
গেরস্থ বাড়িতে ঢেঁকিতে চিঁড়ে কোটার ধুম,
সকালের মিস্টি রোদে খেঁজুর রসে ভেজা চালের মুড়ি, মুড়ির মোয়া;
সুস্বাদু রসনাভোজনে বারান্দায় চট পেতে বই খাতা হাতে বসা,
শীতের সরলতায় এমনি শুরু হয় গ্রাম্য সকাল।
যুবক-পৌড় স্কুল মাঠে খড়-কাগজে আগুন জ্বেলে ছেকে নেয় হাত,
মোড়ের চায়ের দোকানে জমে উঠে আড্ডা
হাট-বাজারে তাজা সবজ্বির বেঁচা-কেনা, মূল্যহ্রাসে ক্রেতার খুশী খুশী মুখ
মাটির উনুনে খড়ি পুড়ে কিষানীর লাজুক মুখ;
কেবল সন্ধ্যার কুপির আলোয় আলোকিত হয়।
জ্বোৎস্নার আলোয় গ্রামের মাঠে মুর্শিদি মারফতি গানের আসর,
কবিয়ালদের ঢাক-ঢোলক ছন্দে মুখরিত মধ্যরাত
গায়ের রাখাল বধূ ঘোমটা টেনে গাছের আড়ালে দোলে; আড়চোখে রাখাল যুবক দেখে নেয় বধূয়ার হাসি;
এমন ঝাঁক বেঁধে পাখীদের উড়ে চলা
মেঠোপথে শিশুদের রিং হাতে দুরন্তপনা
গাছের পাতার ফাঁকে কুয়াশার চাদর ভেদে সূর্যরশ্মির দস্যিপনা;
শীতের মনোরম সকালে গ্রামের সোঁদা মাটির ঘ্রাণ;
আলসে বালিকার সান্নিধ্যেই অনুভব হয়।

Add to favorites
1,190 views