সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক -
এইচ বি রিতা
Published on: জুন 18, 2017
মরহুম সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক,এমপি, আমার বাবা -ব্যক্তিগত জীবনে সহজ সরলভাবে জীবনযাপন করেছেন।প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তেমন শিক্ষিত ছিলেন না।অল্পবিস্তর পড়াশুনা করেছেন।তারপরও নিজে অনেক গান কবিতা লিখেছেন। বাবার স্বরচিত কিছু বক্তব্যঃ
***বর্তমান তরুন সমাজকে মাদকাসক্তের হাত থেকে মুক্ত থাকার উদাত্ত আহবানে তিনি লিখেছেন,
হে নবীন ,
চড়েছ কোন মরনযাত্রা রথে,
তুমি যে আশার আলো-
ফিরে এসো আলোর পথে।
***জীবনের সম্পর্কে উপলদ্ধিমুলক তার বক্তব্য-
নদীরে তোর ভাঁটা দেখে
আমার প্রানে লাগে ভয়,
কোনদিন জানি তোরই মত
আমার গতি হয়।
***আরশীতে বসে সৌন্দর্য পিপাসী বাবা লিখেছেন,
নহে মোর সাজানো কুটির,
নহে অধিকার।
সুন্দরের পূজারী আমি,
যবে ভবে অবতার।
***চলার পথে সুবিধাবাদী স্বার্থবাজদের সম্পর্কে উনার সতর্কবার্তাঃ
বার বার যারা ঘুরে তব দ্বারে,
সাবধান থাকিও তার তরে।
আঘাত হানবে তব পৃষ্ঠে সে,
স্বার্থ সিদ্দ্বি হলে পরে।
একজন মানুষ একাধারে একজন রাজনীতিবিদ,নরসিংদী জেলা বিএনপির আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন,জনগনের ভোটে বারংবার(চারবার)সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।মাটি ও মানুষের কাছাকাছি বসবাস তাঁর।নরসিংদীবাসী দুঃখ সুখে সর্বদাই উনার সান্নিধ্য পেয়েছেন।জনতার সাথে ছিল তাঁর আত্মার সম্পর্ক।যা নরসিংদীর মানুষ মাত্রই জানেন।সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অনবরত কাজ করে গেছেন।
রাজনীতি বাইরে উনার চলা ছিল এক আধ্যাতিক জগতে।মানুষ বিশ্বাস করতেন উনার মাঝে আল্লাহতায়ালা খাস রহমত ছিল। উনার উপর মানুষ ভরসা করতেন।নিজ হাতে পাক করে মানুষকে খাওয়াতেন।মানুষকে খাওয়াতে ভালবাসতেন।এরমধ্যে সপ্তাহের প্রতি বৃহষ্পতিবার সংগীত চর্চা এবং ধ্যানে মগ্ন থাকতেন।ঐদিন কোন দেনদরবার করতেন না।
মা-ছিল উনার কাছে খোদার পরে একমাত্র আশ্রয় স্থল।মাভক্তি মায়ের প্রতি দুর্বলতা উনার জীবনে আশির্বাদ হয়ে কাজ করেছেন।মার একমাত্র পুত্র সন্তান হওয়ায় মার আদর মারদৃষ্টি সব সময়ই পুত্রের কল্যানমুখী ছিল।
নরসিংদীর সিংহপুরুষ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন তিনি।গরীব দুখী মানুষের প্রতি ভিন্ন রকম টান ছিল।খেটে খাওয়া সাধারন মানুষ,রিকসাওয়ালা,দিনমজুর,জেলে,কামার,কুমার সকলেই উঁনার সাথে কাছাকাছি বসে মনের কথা বলতে পারতেন। অত্যন্ত সাহসী,স্পষ্টবাদী,মেজাজী,রাগী মানুষ হিসাবে জানতেন সবাই।কিন্তু উনার মন ছিল কোমল।জীবনদ্দশায় ১৯৯৫ সালে দেখেছেন ঔরসজাত সন্তান মাসুদ আহমেদের হত্যাকান্ড, ১৯৯৯ সালে দেখেছেন গর্ভধারিনী মার মৃত্যু,২০০০সালে ৩য় পুত্র সাব্বির আহমেদের অকাল মৃত্যু।নিজে আক্রান্ত ডায়াবেটিকে।এরমধ্যে ১৯৯৪ সালে জেলা বিএনপির রাজনীতি হাতছাড়া হয়।পুত্রের হত্যাকান্ডের পর একেরপর এক বাড়তি চাপ,অনেকটা বিব্রত অবস্থায় পতিত হন।।
তারপরও রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি।পরবর্তীতে আবারও দলীয় রাজনীতিতে কর্তাব্যক্তির আসনে আসীন হন।জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তা ধারাবাহিক ভাবে পালন করে গেছেন।রাজনীতি করতে গিয়ে দল থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন।চারবার দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।রাজনীতি করতে গিয়ে রাজনীতির বলি হন নিজপুত্র।এতকিছুর পরও নিজের অবস্থান থেকে সরে যাননি।নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অটুট থেকেছেন,মনে ছিল বিশ্বাস,সাহস।জনগন সর্বক্ষন তাদের মনের আওতাবেড়া দিয়ে ঢেকে রেখেছেন তাদের প্রিয়নেতাকে।শত ঝড়ঝাপটায় জনতাই ছিল তাঁর একমাত্র ভরসা।পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে নিজকে নিয়োজিত রেখেছেন।
কার্টেসীঃ কবির আহমেদ ভাই

Add to favorites
783 views