সালেহা -
এইচ বি রিতা
Published on: ডিসেম্বর 3, 2014
তিরিশোর্ধ সালেহা ফ্যাল ফ্যাল করে মা এর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, যেন সে আজ বধির! রাগান্তিত মা তার বলেই যাচ্ছে…
– শোন সালেহা! তোর এখন বয়স হয়েছে। আনন্দ করে বেড়ানোর সময় তোর না, তোর ছেলের। তুই অযথা এত সাজগোছ করিস না তো।
বলেই তিনি হনহন করে রানা ঘরের দিকে চলে গেলো।
বাস্কেটবল হাতে ১২ বছরের ছেলে কিছুটা বিভ্রান্তিকর ভঙ্গিতে বন্ধুদের সাথে পার্কে রওনা দিল।
সালেহা অনড় দাঁড়িয়ে আছে বারান্দার গ্রিল ধরে। বুকের ভিতরটা কেমন দুমড়ে মুচরে কেঁদে উঠছে তার।
সত্যি তো! ডিভোর্সড একটি মেয়ে যার পাশে সুঠাম দেহী কোন পুরুষ নেই, তার সৌন্দর্য দেখার কে আছে? তাকে কি খোঁপায় বকুল ফুল শোভা পায়? মা সত্যি বলেন। বয়স ও সময়ের সাথে অনেক কিছুই বেমানান।
সালেহার গায়ে যে মোহর লাগানো হয়ে গেছে, সালেহা একজন তিরিশোর্ধো ডিভোর্সী মা। সে কি পারে নতুন করে সাজতে? পারেনা। মাঝে মাঝে মাঝরাতে ভুতুম প্যাচার করুন সুরে ঘুম ভেঙে যায় সালেহার। ভয়ে জর্জরিত সালেহা একলা জেগে থাকে। খুব ইচ্ছে হয় শুভদার হাত চেপে বলে ”আমার ভয় করছে শুভদা! জড়িয়ে থাক আমায় আজ রাতে।” বলা হয়না। সময়ের বিবর্তনে ভালবাসাও যে আজ কোন নিষিদ্ধ পল্লীর নর্দমায় পরে থাকা গলিত দেহ! কতবার ভেবেছে সালেহা লাল শাড়ীতে বউ সাজবে।আলতা পায়ে টুকটুক হেঁটে বেড়াবে ভালবাসার আঙিনায়। কোন এক বর্ষায় শুভদার সাথে কলার ভেলায় চড়ে পাড়ি দিবে দুর্গম পথ! ভেবে ভেবে সালেহার কপালে ভাঁজ পরে। ভিতরে পোষে রাখা বেদনায় দীর্ঘশ্বাস নামে। সে দীর্ধশ্বাস যেন শহরের সুদীর্ঘ গলির চেয়েও অনেক দীর্ঘ!
মাঝে মাঝে সালেহা পড়ন্ত বিকেলে চা এর কাপ হাতে নিশ্চুপ বসে থাকে খোলা বাড়ান্দায়। সালেহার শান্ত শীতল চোখ নীরবে কাঁদে। বুঝেনা। কেউ বুঝেনা। না বুঝে সময় না বুঝে বয়সের সাথে সাথে নিভে যাওয়া মন; না বুঝে সমাজ ও আপনজনরা।
সালেহার কত কিছুতেই না কষ্ট। অষ্ট প্রহরে একলা জেগে থাকার কষ্ট..খোঁপায় বেলী ফুল গুজঁতে না পারার কষ্ট…রাতের আকাশের শুকতারা ছুঁতে না পারার কষ্ট…জ্বরে থরথর গায়ে কারো কোমল হাতের স্পর্শ না পাওয়ার কষ্ট! মাঝরাতে কারো উষ্ণ সান্নিধ্যে ভালবাসায় আচ্ছন্ন হতে না পারার কষ্ট! সালেহার কত কিছুতেই না কষ্ট।
সালেহা ভুলে যায় সময় ও বয়সের সাথে অনেক কিছুই বেমানান। মা ঠিকি বলেন…তিরোশোর্ধ ডিভোর্সী নারীর সাজতে নেই।

Add to favorites
791 views