যতি বা বিরাম চিহ্ন ব্যবহার -
কাব্য কবিতা
Published on: অক্টোবর 12, 2015
——————— ডার্ক এভিল/ কবিতা তুমি ভবিতব্য কষ্টের প্রতিচ্ছবি
বর্তমানে অনেক লেখকই তাদের পদ্য-গদ্যে, বিরাম বা যতি চিহ্ন ব্যবহারকে খুব বেশী প্রয়োজন বলে মনে করেন না। বিরাম চিহ্ন’র ভুল ব্যবহারে কোন শব্দ বা বাক্যের মূলভাব বিঘ্নিত হতে পারে। এতে করে লিখার সৌন্দর্য্য ও নষ্ট হয়। তাই পদ্য-গদ্যে, বিরাম চিহ্ন ব্যবহারে সতর্ক থাকা আবশ্যক।
বিরাম বা যতি চিহ্ন কেন জরুরী?
কোন বাক্যের অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝানোর জন্য বিরাম বা যতি চিহ্ন’র ব্যবহার জরুরী।
(১) দাঁড়ি (.।)
এই চিহ্নটি পরিপূর্ণ অর্থবোধক বাক্য বা কথার শেষে বসানো হয়। যেমনঃ আল্লাহ সর্বশক্তিমান।
(২) কোলন (ঃ)
যা পূর্বোক্ত কথা বুঝিয়ে বলার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ শিক্ষক নিজ ছাত্রকে বললেনঃ বই খুল এবং পড়। লায়নঃ অর্থ সিংহ। বাংলা প্রবাদ বাক্যঃ নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা।
(৩) কমা (,)
এই চিহ্নটি ব্যবহৃত হয় দীর্ঘ কথায় অবস্থিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাক্য সমূহের মধ্যখানে। দীর্ঘ বাক্যের খণ্ড খণ্ড অংশ সমূহের মধ্যখানে। কোন বিষয়ের প্রকার সমূহের মধ্যখানে। সম্বোধন পদ এর পরে। যেমনঃ হাসান একজন ভালো মানুষ, সে মানুষের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করে না, শপথ ভঙ্গ করে না। হে মাহমুদ, নিজ পাঠে মনোযোগী হও।
(৪) সেমিকোলন
যা সাধারণত এমন দুটো বাক্যের মাঝখানে বসে যেগুলোর মধ্যে একটি অন্যটির কারণ বা ফলাফল হয়ে থাকে। তাছাড়া দীর্ঘ কোন বাক্যের মাঝখানেও কোন কোন সময় সেমিকোলন বসানো হয়। যেমনঃ আজ মুরুব্বী সাহেবকে সম্মানিত করা হয়েছে; কারণ তিনি শব্দনীড়ের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি।
নিজ পাঠে পরিশ্রমী এবং নিজ চরিত্রে উত্তম ছাত্র পরিশ্রমের দিকে তাকায় না; সে পরিশ্রমের ফলাফলের দিকে তাকায়।
(৫) হাইফেন (-)
সাধারণত ক্রমবাচক সংখ্যার পরে বসে। এছাড়া কখনো কখনো বাক্যের উভয় অংশের মাঝখানে ও বসে; যখন উভয়ের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। যেমনঃ ভালো ব্লগ সমুহঃ ১- শব্দনীড়। ২- প্রথম আলো।
(৬) ড্যাস
এ চিহ্ন দুটো পূর্বাপর সম্পর্কহীন বাক্য বা দোয়াসূচক বাক্যের উভয় পাশে বসে। যেমনঃ আমার এক বন্ধু- সে একটি কোম্পানির মালিক- আমাকে সে বলেছে যে, আগামী মাসের প্রথম দিকে তার কোম্পানি ছুটি ঘোষণা করবে। আমার শিক্ষক- আল্লাহ তাকে দয়া করুন- শ্রদ্ধার পাত্র একজন মানুষ ছিলেন।
(৭) বন্ধনী ()
এর ভিতরে সাধারণত ব্যাখ্যাসূচক শব্দ বা সন্দেহ ভঞ্জন সূচক শব্দ লেখা হয়। এছাড়া কখনো কখনো বন্ধনীর ভিতরে এমন শব্দ লেখা হয়ে থাকে যার প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা উদ্দেশ্য হয়। যেমনঃ (যে চেষ্টা করে সে পায়)
(৮) ফুলযুক্ত বন্ধনী {}
বিশেষত কোরআন শরীফের আয়াত উদ্ধৃত করা হলে আয়াতের উভয় পাশে এ বন্ধনী দেয়া হয়।
(৯) প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)
যা প্রশ্ন জ্ঞাপক বাক্যের শেষে দেয়া হয়। যেমনঃ তুমি কে?
(১০) বিস্ময় চিহ্ন (!)
যা বিস্ময়, আনন্দ, বিষাদ, লজ্জা, বিপদে সাহায্য কামনা এবং দোয়া ইত্যাদি জ্ঞাপক বাক্যের শেষে যুক্ত করা হয়। যেমনঃ শব্দনীড় ব্লগ কতইনা সুন্দর! আগুন! আগুন! হায় আফসোস! সময়গুলো অযথা নষ্ট হল।
(১১) অনুল্লেখ সূচক চিহ্ন
যখন কারো উক্তির পুরোটা উল্লেখ করা উদ্দেশ্য হয় না, তখন প্রয়োজনীয় অংশটুকু উল্লেখ করে অবশিষ্ট অংশের স্থলে এ চিহ্ন দেয়া হয়। যেমনঃ আমি কোন ভালো মানুষ নই . .
(১২) উদ্ধৃতিচিহ্ন ( ‘-’ অথবা “-”)
ইংরেজীতে একে কোটেশন মার্ক বলে। ইংরেজী ভাষা থেকেই এদের আমদানি করা হয়েছে , কারণ বাংলায় এ-ধরণের চিহ্ন ছিল না। একে উদ্ধৃতিচিহ্ন বা উদ্ধারচিহ্ন বলে , বাংলাতে।
*অন্যের কথা উদ্ধৃত করতে হলে কিংবা কোনো কথায় পাঠকের দাবি করতে হলে উদ্ধৃতিচিহ্নের প্রয়োজন পড়ে।
*উদ্ধতিচিহ্ন দু রকমের হয়ে থাকে : এক-উদ্ধতি ( ‘ ) বা সিঙ্গল কোটেশন এবং জোড় বা দুই উদ্ধৃতি ( “ ) বা ডাবল
কোট্ ।
(১৩) এক-উদ্ধতি ( ‘ ’) বা সিঙ্গেল কোট্ :
*কথোপকথন ও সংলাপে উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন –
পা টিপে টিপে দুপুরবেলা উকিলউদ্দিন এসে হাজির।
*নির্দিষ্ট শব্দে মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন – তার নাম ছিল লালু। হিন্দিতে ‘লাল’ শব্দটার অর্থ
হচ্ছে ‘প্রিয়’ । সে সকলের প্রিয় ছিল ।
(১৪) জোড় উদ্ধৃতি ( “ ”) বা ডাবল কোট্
*যেখানে কেবল এক ধরণের উদ্ধৃতিচিহ্নের-ই প্রয়োজন বা দরকার যেখানে এক-উদ্ধৃতিচিহ্ন বা জোড়-উদ্ধৃতিচিহ্ন যেকোন
একটি ব্যবহার করলেই চলে।
কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে দু-জাতীয় উদ্ধৃতিচিহ্ন-ই দরকার পড়ে সে-সব জায়গায় দু-একটি নিয়ম অনুসরণ না করলে চলে না।
নিচের উদাহরণ থেকে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করা যাক।
১-এই “ভারতবর্ষ” কাগজেই অনেক দিন আগে ডাক্তার শ্রীযুক্ত
নরেশবাবু বলিয়াছিলেন ‘না জানিয়া শাস্ত্রের দোহাই দিয়ো না।’
২-হৈম ব্যথিত হইয়া প্রশ্ন করিল “কেহ যদি বয়স জিজ্ঞাসা করে কী বলিব “ বাবা বলিলেন, “মিথ্যা বলিবার দরকার নাই,
তুমি বলিয়ো, ‘আমি জানি না – আমার শাশুড়ি জানেন’।”
*এক জনের বক্তব্যের ভিতরে যদি ভিন্ন বক্তব্য উদ্ধৃত হয় তা
হলে প্রধান বক্তব্যের ক্ষেত্রে জোড়-উদ্ধৃতিচিহ্ন এবং তার অন্তর্গত উদ্ধৃতিতে এক-উদ্ধৃতিচিহ্নে লাগবে।
(১৫) ইলেক বা লোপ চিহ্ন ( ‘ ) কোন বর্ন বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত উচ্চারন বোঝাতে ইলোপ বা লোপ চিহ্ন ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন-
মাথার ‘পরে জলছে রবি ( ‘পরে= উপরে)
ওখানে কা’রা ( কা’রা= কাহারা)
———————————–

Add to favorites
6,906 views