স্বরবৃত্ত ছন্দ বাই ডার্ক এভিল -
কাব্য কবিতা
Published on: অক্টোবর 12, 2015
স্বরবৃত্ত ছন্দ কাকে বলেঃ
যে ছন্দ পাঠকালে, উচ্চারন গতিবেগ দ্রুত হয়, শ্বাসঘাত পরে, পর্বগুলো হয় ছোট কেবল ৪ মাত্রার এবং যে ছন্দে অক্ষর মানেই ১ মাত্রা ধরা হয়, তাকে স্বরবৃত্ত ছন্দ বলে।
স্বরবৃত্ত ছন্দ জানতে হলে, তার আগে অক্ষর, পর্ব, মাত্রা, যতি বা ছন্দ-যতি, ও শ্বাসঘাত জানা জরুরী।
****মুক্তাক্ষর ও বদ্বাক্ষরঃ যখন একটি অক্ষরে একটিই বর্ণ থাকে এবং উচ্চারনে বাধাগ্রস্থ্য হয়না, তখন তাকে মুক্তাক্ষর বলে। যেমন – কলম= ক + লম। এখানে ” ক ” হচ্ছে মুক্তাক্ষর।
যদি একাধিক বর্ণ মিলে একটি অক্ষর বুঝায়, তাকে বদ্ধাক্ষর বলে। যেমন-
কলম = ক + লম। এখানে ” লম” হচ্ছে বদ্ধাক্ষর ।
**** অক্ষরঃ স্বল্পতম প্রয়াসে এক ঝোঁকে শব্দের যে অংশতুকু উচ্চারিত হয়, তাকে অক্ষর বলে। যেমনঃ
কলম = ক + লম = ২ অক্ষর।
চিরজীবি = চি + র +জী + বি = ৪ অক্ষর।
**** মাত্রাঃ কবিতার প্রতি পংক্তির মধ্যে যে ধ্বনিপ্রবাহ থাকে, এবং তাকে উচ্চারনে যে সমইয়ের প্রয়োজন হয়,সেই উচ্চারনকালের ছোটো ছোট এক-একটা অংশই হল মাত্রা।
বাংলা সাহিত্যে এই মাত্রা সংখ্যা একেক ছন্দে একেক রকম ব্যবহৃত হয়।
****শ্বাসঘাতঃ কবিতা পাঠের সময়, পর্বের প্রথম অক্ষরের উপর জোর দিয়ে পাঠ করাকেই শ্বাসঘাত বলে। যেমন-
মা কেঁদে কয় / মঞ্জুলী মোর / ঐ তো কচি / মেয়ে = ৪+৪+৪+২ মাত্রা
এখানে ( মা – মন – ঐ ) ৩ টি পর্বের প্রথম অক্ষরে জোর পরে বেশি।
****যতি বা ছন্দ-যতিঃ কোন বাক্য পড়ার সময় শ্বাসগ্রহণের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের অন্তর অন্তর যে উচ্চারণ বিরতি নেয়া হয়, তাকে ছন্দ-যতি বা শ্বাস-যতি বলে।
যতি ২ প্রকার- হ্রস্ব যতি ও দীর্ঘ যতি। অল্পক্ষণ বিরতির জন্য বাক্যের মাঝখানে হ্রস্ব যতি দেওয়া হয়। এবং বেশিক্ষণ বিরতির জন্য বাক্যের দীর্ঘ যতি ব্যবহৃত হয়।
যেমনঃ- কলস নিয়ে ∣ সবাই তখন ∣ পাড়ায় গেছে ∣ চলে ∣∣
এখানে, কলস নিয়ের পর হ্রস্ব যতি, সবাই তখনের পর হ্রস্ব যতি, পাড়ায় গেছে এর পর হ্রস্ব যতি …।। পরেছে।
আবার, কলস নিয়ে সবাই তখন পাড়ায় গেছে চলে —- পুরা লাইন্টার পর দীর্ঘ যতি পরেছেম।
( ∣ = হ্রস্ব যতি ও ∣∣ = দীর্ঘ যতি)
****পর্বঃ বাক্য বা পদের এক হ্রস্ব যতি হতে আরেক হ্রস্ব যতি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলা হয়। যেমনঃ
কলস নিয়ে ∣ সবাই তখন ∣ পাড়ায় গেছে ∣ চলে ∣∣——– এখানে একটি চরনে মোট ৪টি পর্ব। ৩টি মুল পর্ব। ১টি অতিপর্ব।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ এখন আসুন স্বরবৃত্ত ছন্দের গঠন আলোচনা করিঃ
স্বরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্যঃ
– স্বরবৃত্তের মূল বিষয়টিই আবর্তিত হয় দুটি সিলেবল বা দলকে (মুক্ত ও বদ্ধ দল) ঘিরে।
– স্বরবৃত্ত দ্রুত লয়ের ছন্দ।
– এই ছন্দের মূলপর্ব বা পূর্ণপর্ব চার মাত্রাবিশিষ্ট।
– মুক্তাক্ষর এবং বদ্ধাক্ষর উভয়ই একমাত্রা বিশিষ্ট।
– পর্বগুলো ছোট ৪ মাত্রা বিশিষ্ট।
– প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষর শ্বাসাঘাতযুক্ত।
উদারহনঃ
বাঁশ বাগানের ∣ মাথার উপর ∣ চাঁদ উঠেছে ∣ ওই ∣∣
এখানে –
~~বাঁশ-১ মাত্রা + বা – ১ মাত্রা + গা – ১ মাত্রা + নের – ১ মাত্রা = ৪ মাত্রা এবং ৪ অক্ষর।
~~ বাঁশ বাগানের ∣ মাথার উপর ∣ চাঁদ উঠেছে ∣ ওই ∣∣ = ৪+৪+৪+১ মাত্রার ৪টি পর্ব।
~~ বাঁ – মা – চাঁ – ও ___ প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরটি উচ্চারনের সময় শ্বাসঘাত পরে।

Add to favorites
2,891 views