আমি নসিমনঃ ০৫.সমীকরণ -
এইচ বি রিতা
Published on: অক্টোবর 27, 2017
জীবন মানেই সমাধান আশান্বিত সমীকরণ! যার সমীকরণ মিলে যায়, জীবনের স্বার্থকতা সেই খুঁজে পায়। ব্যাক্তি বিশেষে সমীকরণের ধরণ ভিন্ন হয়। কারো কাছে প্রিয় মানুষটিকে কাছে পাওয়া সমীকরণের সমাধান। আবার কারো কাছে বিষয়টা নিতান্তই অমূলক। তার কাছে হয়তো অন্যের দুঃসহ দিনে পাশে থাকাটাই জীবনের স্বার্থকতা; সমাধানে সমীকরণ।
কেউ নিজ গুনে হাজার বছর মানুষের মনে স্থান দখন করে নেন। কেউ নিজ কৃতকর্মে ঘৃণার সাথে মানুষের স্মরণে আজীবন থেকে যান। আমরা মাদার তেরেসাকে স্মরণ করি শ্রদ্ধার সাথে। আবার ‘ফার্স্ট মার্শাল অব দ্য এম্পায়ার’ অধীকারকারী ফ্যাসিবাদের জনক বেনিটো মুসোলিনিকেও মানুষ স্মরণ করে, তবে শ্রদ্ধা নয়; তার রাষ্ট্রীয় অরাজকতার জন্য। আমরা ভাল ও মন্দ এই দুই কাজের জন্যই মানুষকে মনে রাখি। তাদের দক্ষতাকে আমরা “ভাল” ও “মন্দ” আকারে বিচার করি তৃতীয় পক্ষীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু তাদের কাছে নিজ নিজ দক্ষতা ও তার স্বার্থক প্রয়োগই জীবনের স্বার্থকতা অর্থাৎ সমাধানে সমীকরণ।
পাকিস্তানের আইরন লেডি খ্যাত মুনিবা মাজারী যখন গাড়ী দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে স্বামী, সংসার ও মা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে মানবতার পথে নিজেকে উৎসর্গ করে জীবনের স্বাথকতা খুঁজে নেন, তখন তার স্বামী একই কারণে স্ত্রীকে ছেড়ে অন্য নারীর বাহুতে জীবনের স্বার্থকতা দেখেন। ঘটনা একই, ব্যবধান শুধু তাদের দৃষ্টিভঙ্গির।
সময়ের দাবীতে আমাদের জীবনের উত্থান পতন ঘটতেই থাকে। আর তখন ব্যাক্তিবিশেষে সমীকরণটাও হয়ে যায় অদ্ভূত! আমরা শেকড় উপড়ে কেবল সামনে দেখি, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়। আমরা ভুলে যাই অতীত, প্রিয় মুখ, প্রিয় সুখ। শুধু সামনে বাড়ার তাড়া; যদি জীবনের সমীকরণ মিলে যায়!
জীবনটা আসলেই কি? যখন থেকে নিজেকে জেনেছি, তখন থেকেই জীবনের সমীকরণ মিলাতে ব্যাগ্র হয়েছি। তখন জানতামনা জীবনের অর্থ কি! আজ মনে হয়, জীবন মানেই শুধু সমাধানে সমীকরণ নয়, এখানে দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি সর্বপ্রথম। দৃষ্টিভঙ্গির উদারতায় সমাধান আশান্বিত সমীকরণটি সহজেই মেলানো যায়। খুব কঠিন নয়।
জন্ম নিলাম, বড় হলাম, ভাল চাকরী হল, সুখের সংসার হল কিংবা রোগে-শোকে- অনুতাপে লড়াই শেষে একদিন মরে গেলাম, এটাই কেবল জীবন হতে পারেনা। জীবনকে স্বার্থকরুপে বাঁচিয়ে রাখতে, পৃথিবীর বুকে এমন কিছু করে যাওয়া বা রেখে যাওয়া প্রয়োজন যাতে করে মৃত্যুর পরও আমরা স্বীয়কর্মে মানুষের মনে বেঁচে থাকি! সেটা অবশ্যয়ই হিটলার বা মুসোলিনির মত নয়; মহাত্ববোধের মাধ্যমে।
যখন আমরা মা হবার ক্ষমতা ধারন না করি, তখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি! মনে হয়, জীবনের আশান্বিত সমীকরণটি মিলানো হলনা! আমরা কেন জেগে উঠিনা? কেন ভাবিনা পৃথিবীতে হাজারো নবজাতক পিতৃ পরিচয়হীন। পিতা-মাতাহীন হাজারো শিশু অনাহারে পথে ঘুরে। তাদের কাউকে কেন কোলে তুলে নেইনা? তাদের কাউকে কেন নিজ অধীকার দিতে উদার হইনা? দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেলে সমাধান আশান্বিত সমীকরণটি সহজেই মিলে যায়!
It’s ok to cry! It’s ok to be failed! But it’s not ok to give up!

Add to favorites
986 views