আমি রাস্তায় হেটে কতো কঠিন দেখেছি,
দেখেছি কতো কোমল,হেসেছি মধুর
হেসেছি তেতো;
এখনও আমি হাঁটি,এ বাংলার কোন ব্যস্ত শহরে,
সবাই ঘুরে ঘুরে জীবন খোঁজে, খোঁজে
আয়েশ,ইচ্ছে আকাঙ্খার পথ;খোঁজে
পায়েশ,মসলায়-ভরা টকঝালের সেই তৃপ্তির ভোজন শেষে।
–
তেমনি আমিও খুঁজি,রাস্তার ধারের এ পাড়ের ওপাড়ের,
বাংলার চিত্র-চিহ্নের রথ; খুঁজি
যখনই মস্তিষ্ক বলে ওঠে তোমার শক্তিযন্ত্রের জ্বালানি যে ফুরিয়ে গেছে,
বেলা যে উদরের তৃষ্ণা মেটানোর রেশ
তাই আচমকা কারোয় হাত পেতে চাই একটুকরো সন্দেশ,
নাহয় ডাস্টবিনের সর্বোচ্চ ঘেন্নার মাঝে খুঁজে নিই তৃপ্তি
তাতেই উদরের মিষ্টি ভাষা,বলে -খুব বেশ।
–
আমি রাস্তায় হেটে কতো রঙের পরিধেয় দেখেছি,
দেখেছি কতো নকশার বাহার,
পোশাকে বাঙালির নতুন পরিকল্পনা আর জল্পনার আহার।
কতো ফিটফাটে আজি শ্রদ্ধা অর্জিত,
যত সোনালি সন্ধ্যা তত মার্জিত;
কতো বদলে যায় মানুষ,কতো বদলে পৃথিবী,
তাই কতো বদলেছে এই বাঙালী।
আমিও বদলেছি! সুন্দর সুপরিধেয় আমাতে বেমানান
ছেড়া অর্ধবস্ত্রে তবুও আমি দিব্যি ঘুরে বেড়াই,
আমার লাগেনা নকশার বাহার
লাগেনা অর্জিত শ্রদ্ধা,হতে হয়না মার্জিত;
কি অদ্ভুত! তবু এযে সত্য
আমি চিরাচরিত বাঙালির বাঙালিয়ানার নেতির স্বীকার।
আমি ভাতের জন্যে হন্যে হন্যে ঘুরে বেড়াইনি,
আমি খেয়েছি তবু; আজ নেই প্রতিদিনকার আহার
আমি চিরদিনের চিরচেনা অসহায় বাঙালির অদ্ভূত বাঙালিয়ানার স্বীকার।
–
আজো আমি ছাড়া সবে যায় সম্মুখে
আধুনিকতা, নতুনত্ব কতো সজীব জীবন্ত দলে,
আজও বক্তব্যে আছে অমর সেই সেরা বাঙালির প্রবাদ,
শুধু সবার চোখে যে আমি সেই রাস্তার উন্মাদ।
অর্ধবস্ত্রের এই দেহের পাশে দাড়াতে কারো ভয়
কারো বা ঘেন্না হয়;
আমার সুখ নেই,নেই দুঃখ তাই সবই সয়।
–
আমি পথ হেটে হেটে কিছু দেখেছি,তাই শিখেছি,
প্রকৃতির পরিকল্পনায় আমারো শেষ আছে
তবে তাতে কারও কিছু নেই এসে যাওয়ার,
যার কিছু ছিল পরোয়া,একদা মাটি মুক্তির এক বেলায়,
হারায়েছি তাদের! হয়েছিল যা হওয়ার।
তবু আমার শেষে লাশটি ঠিক চার কাঁধে করে হবে,
হবে আয়োজন কবর দেবার,
এটাও যে নিদর্শন বাঙালির চিরচেনা সরল মানবিকতার।
–
শেষে কিছু বাক্য আমায় বলতে দিলে হতো ভাল,
সবের মত আমিও যে চিনি আঁধার আর আলে;
যাক! নাইবা শুনলে প্রতিদিনের মতো আজ,
তবু বলে যাই, শোনো
–
বীর বাঙালী,
হৃদয় মনের সে সাঁচা অভিরুচিতে চেয়েছিল স্বাধীনতা
দেদার রক্ত সংগ্রামে স্বাধীনতা হয়েছিল সুদিদ্ধ,
তবে আজ কেন সে দুস্তর স্বাধীনতা অসার হল?
আজও কেন আমি দেখি সেই অসহায় বাঙালীর নির্মম জীবন দশা;
আজও প্রতিদিন চলে খুলখোলাতে, আর আপন বাটে
না পরে প্রয়োজন; অবাধ ধর্ষণ
আজও প্রতিদিন,শত বাঙালি নারীর কর্ণের কাছে গর্জে শত মরনাস্ত্রের গর্জন;
আজও প্রতিদিন, দিনের আলো শেষে রাতের কৃত্রিম আলোর খোঁজে যাওয়া পিতা,ফেরেনা সন্তানের আদরে,
আজও প্রতিদিন,মা কেঁদে উজার করে বলে, তার সন্তানের হত্যাকারীর শাস্তি দিন!
আজও প্রতিদিন,ক্ষমতা লোভিরা,
সেই পিশাচ ক্ষমতাবানেরা চুষে চলেছে নিরীহ বাঙালীর রক্ত;
আজও প্রতিদিন, রেডিও সংবাদ পত্রের অর্থে
হৃদয় কেঁপে হয় ভীত শক্ত।
–
আমি দেখেছি তোমরা সোচ্চার হয়েছো বাঙালী, আজ
সোচ্চার হয়েছো সেখানে,যেখানে তোমার অসহায় মস্তিষ্ক খাটে,
তাই অচেতন সবে সদা গর্জে ওঠো,না ভেবে শত্রু সয়ং তোমার বাটে।
ধিক্কার তোমাদের,
ধিক্কার সে উন্মাদ চেতনা যা কলুষ তেলে ভাজা!
তোমরা মানছোনা তারা মিথ্যে,রক্ত পিয়াসী
তারা শকুন,মৃত্যুর ওঁত আয়াসী,
তারা হরিণের মত লুকিয়ে,
তবু সিংহের মতই রাজ্যের রাজা।
দেশ মাটি সব খাচ্ছে চিরে
কোটি বাঙালীর চোখের আড়ালে,
আড়ালে নয়,সবি ভীতির ভারে
বল! একি মিথ্যে?
পারবেনা; তোমরা নিরীহ
অপসংস্কৃতি অপসংস্কার আর অপকর্মই তোমরা করবে সমীহ,
আমি শত বাক্যে সব বোঝাতে নির্মল থাকি
তবু যে আমি অক্ষম;
তাই মনে করিয়ে দিই আমি দীর্ঘ রক্ত রথের সারথী,
আমি লক্ষ প্রাণের একটুরো জীবিত শক্তি,
আমি উন্মাদ!আমি উন্মাদ মুক্তি।
বাক্য আমার কতোর হাসির উদ্রেক
অর্ধবস্ত্র দেহে আমি ধিক্কারের একজন,
হে! আমি উন্মাদ,কালো নোংরা দেহে
আমার কন্ঠে সতত বিড় বিড় কথা!সত্যের কথা
শোনে নাই কেউ! আমি উন্মাদ,
তবু ভুলিনী একটিও স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রবাদ।

Add to favorites
2,055 views