এইতো সেদিন -
আসাদুজ্জামান শাওন
Published on: অক্টোবর 3, 2015
এইতো সেদিন
আসাদুজ্জামান শাওন
__________________
এইতো সেদিন……
ভোর বেলায় তোমার সাথে সূর্য-স্নানে যাবো বলে,
আর যাওয়া হলোনা।
প্রভাতের প্রথম প্রহরে তোমার হাতটি ধরে,
তেপান্তরের মাঠে হাঁটবো বলে,
আর হাঁটা হলোনা দু’জনের।
পাড়ি দেওয়া হলোনা একসাথে,
হাজারটা মাইলের পথ।
হতে পারলাম না ইতিহাস!
শুনতে পারলাম না পাখিদের কন্ঠে মৃদু গান।
যেতে পারলাম না তেপান্তরের মাঠে,
ঐ অনিকেত প্রান্তরে।
দেখতে পারলাম না!
মিষ্টি রোদ আর ছায়ার লুকোচুরি খেলা।
এইতো সেদিন……
ক্লান্ত দুপুরে হিজল গাছের নিচে পাশা-পাশি বসবো বলে,
আর পাশা-পাশি বসা হলোনা;
নেয়া হলোনা স্বস্তির শেষ দীর্ঘশ্বাসটুকু।
চোখে-চোখ রেখে বলা হলোনা হাজারটা স্মৃতির গল্প।
দেখা হলোনা অদূরের,
ঐ বিলের শাপলা ফুলগুলো।
ভেজানো হলোনা দু’জনার পা ঐ অদূরের বিলটাতে,
যেখানে আজও স্মৃতিরা ভর দুপুরে খেলা করে।
দু’জনার শরীরে মাখা হলোনা রোদের মিষ্টি আভা।
বুনতে পারলাম না!
তোমার আর আমার অসমাপ্ত স্বপ্নগুলো।
এইতো সেদিন……
বিকেল বেলায়-
সবুজ মাঠের গালিচায় পাশা-পাশি বসে,
আকাশটাকে ছোঁবো বলে,
আর আকাশটা ছুঁয়ে দেখা হলোনা।
দেখা হলোনা আকাশ আর মেঘের স্কেচ্ আঁকার প্রতিযোগিতা।
দু’চোখে বন্দী করতে পারলাম না!
রংধনুর ঐ সাতরং।
পড়ন্ত বিকেলে-
তোমার কোলে মাথা রেখে,
তোমার ঐ মৃদু কন্ঠে গান শুনবো বলে,
আর শোনা হলোনা তোমার ঐ মৃদু কন্ঠে গান।
নদীর পাড়ে বসে,
তোমারই গাওয়া কোন প্রিয় সুরকে,
বন্দী করতে পারলাম না আমারই ছয় তাঁরের গীটারে।
শুনতে পারলাম না!
রাখালের বিমোহিত বাঁশির সুর।
এইতো সেদিন……
গোধূলি বেলায়-
গরুর গাড়িতে পাশা-পাশি বসে,
মেঠো পথের ধূলি-কণা দেখবো বলে,
আর দেখা হলোনা মেঠো পথের ধূলি-কণায় বন্দী মিথ্যে প্রতিশ্রুতি।
দু’জনার ক্লান্ত শরীরে মাখাতে পারলাম না মেঠো পথের ধূলি-কণা নামক মিথ্যে ভালোবাসা।
শোনা হলোনা গাড়োয়ানের কন্ঠে কোনও ভালোবাসার শেষ যাত্রার গান!
এইতো সেদিন……
সন্ধ্যা বেলায়-
দূর আকাশের ধ্রুবতারা দেখবো বলে,
আর ঐ দূর আকাশের ধ্রুবতারা দেখা হলোনা।
হাতে-হাত বন্দী রেখে দাঁড়িয়ে থাকা হলোনা অনন্তকাল।
ভেজা হলোনা বৃষ্টিতে!
দেখতে পারলাম না……
ঐ নীল রঙের শাড়ী
রেশমী চুড়ি,কপালের ঐ কালো টিপ।
আর ঐ সন্ধ্যে বেলায় বৃষ্টি ভেজা চুল।
আর আমার,মহাকাল নামক প্রিয়াকে!
এইতো সেদিন……
তোমার সাথে চাঁদের আলোয় স্নান করবো বলে,
আর চাঁদের আলোয় স্নান করা হলোনা।
হলোনা জ্যোৎসনা-বিলাস!
দেখা হলোনা কোটি তারাদের মিছিল,
শোনা হলোনা তারাদের গল্প।
চোখ দিয়ে লিখতে পারলাম না,তারাদের মহাকাব্য।
তোমার ঐ অধরে এঁকে দিতে পারলাম না!
ভালোবাসার কোনও রক্তিম মানচিত্র।
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলা হলোনা!
ভালোবাসি মহাকাল
বড্ড ভালোবাসি।
হয়তবা,আমাদের দু’জনের নিয়তিটাই এমন!
রংহীন কিংবা ধূসর
অথবা সাদা-কালো।
হয়তবা,রঙিনের কোন স্থান নেই।
হয়তবা,আমি নেশার ঘোরে বলছি এসব,
আমার চাওয়া-পাওয়া গুলোই এরকম অদ্ভুদ;
অন্যরকম অথবা ভিন্ন।
মহাকাল,আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম!
তুমি হারিয়ে গিয়েছ,
হারিয়ে গিয়েছ আমারই পটভূমি থেকে।
তারপরও আমার অন্তিম চাওয়া-পাওয়া গুলো শুধু তোমাকে নিয়ে,মহাকাল।
শুধু তোমাকে নিয়ে!
জানো মহাকাল,
তোমার স্মৃতিগুলো না আমাকে বড্ড কাঁদায়!
করে দেয় আমাকে এলোমেলো।
শুধুমাত্র তোমায় এক চিলতে ভুলবো বলে,
ডুবে থাকি বিলাসের জলে।
থাকি চেতনাহীন!
শুধুমাত্র তোমায় আর তোমার অপষ্ট স্মৃতিগুলোকে ভুলবো বলে।
তোমাকে হারানোর পর থেকেই বন্দী ঐ বিলাসের জলে,
আর বন্দী আমার হাজারটা আর্তনাদ আর
তোমার কয়েক’টা দিনের ধূসর স্মৃতি।
আজও ডুবে থাকি বিলাসের জলে;
থাকি চেতনাহীন কবি হয়ে,
লিখে যাই মাতাল-কাব্য তোমার অপষ্ট স্মৃতি দিয়ে।
নেশার্ত চোখে খুঁজে ফিরি তোমার ঐ মেহেদী রাঙ্গা হাত,ঐ মলিন অন্ধকারে।
জানি রাত বাড়ছে!
হয়ত,একটু পরেই ভোর হবে।
একটু পরেই হয়তবা আমার জানালার মধ্য দিয়ে উঁকি দিবে ঐ ভোরের সূর্য।
ভিজিয়ে দিবে আমায়,করিয়ে দিবে স্নান।
আমি ভোরের অপেক্ষায় আর চিরচেনা সূর্য-স্নানের।

Add to favorites
2,327 views