এপিটাফ -
আসাদুজ্জামান শাওন
Published on: সেপ্টেম্বর 30, 2015
এপিটাফ
আসাদুজ্জামান শাওন
————————————
রাতটি ক্রমশ বাড়ছে!
আর বাড়ছে;
আমারই দীর্ঘশ্বাস।
যেন অনেকটা ঘুণে খাওয়া সময়ের অযাচিত,
তোমার আর আমার ফেলে আসা;
কোন অপার্থিব কাব্যের দীর্ঘশ্বাসের মিথ্যে সংসার।
বার বার চেষ্টা করেছিলাম আমি;
ঘুমটা কে বন্দী করবো।
কিন্তু আমি ব্যর্থ,
দু’চোখে ঘুম নামে শব্দটাকে বন্দী করতে পারিনি।
আজ বহুকাল হলো,
একটুও ঘুমাতে পারিনি মহাকাল!
অদূরে মহাকালের এপিটাফটা পড়ে আছে,
যেন দীর্ঘ প্রতারণার স্মারকলিপি নিয়ে।
মহাকাল চলে যাওয়ার সময়
দৃশ্যমান এপিটাফটা!
ঐ শতবর্ষের বির্বতনের কালের সাক্ষী
জমিনের বুকে বিদ্ধ করে,
চলে গিয়েছিলো;
গোপনে!
আমারই সীমানা থেকে।
যেমনটা আধাঁরের পর দিনের শুরুর মত!
মহাকাল হারিয়ে গিয়েছিলো,
স্মৃতির কাব্য থেকে অজানা শব্দে,
অনেকটা নীরবে।
বারান্দার রেলিং আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে
রাতের আকাশটার দিকে,
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
যেন শতবর্ষের দীর্ঘশ্বাস আমার;
আর
সাথে মহাকালের চলে যাওয়ার স্মারকলিপি অদূরের ঐ প্রায় বিধ্বস্ত এপিটাফ,
এ যেন এক অন্তিম বিষাদের দীর্ঘশ্বাস।
আজ অনেকদিন হলো!
মহাকালের সেই মুখটা দেখিনি;
হয়ত;কোনদিন আর দেখতেও পারবো না!
মহাকালের এপিটাফটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে,
শতবর্ষের বির্বতনের কালের সাক্ষী জমিনের বুকে বিদ্ধ হয়ে।
তখনও,দাঁড়িয়ে আকাশটার দিকে শূন্য দৃষ্টি আমার!
আর একরাশ নীল-কাব্যের দীর্ঘশ্বাসের যাত্রা।
আজ বড্ড মনে পড়ছে তোমায়,মহাকাল!
সকাল নেমে এলেই…
ভেজা চুলে দাঁড়াতে,আমারই সামনে,
আমি হয়ত ঘুমে বিভোর
থাকতাম।
তারপর,ভেজা চুলের ঝাপটায়
ভিজিয়ে দিতে আমায়,
ঘুম ভাঙ্গাতে আমার।
আর বলতে,এবার যে ভোর হলো।
জানি,মহাকাল!
হয়ত,আর কোনদিন তুমি তোমারই চুলের ঝাপটায়,
ঘুম ভাঙ্গাবেনা আমার।
হয়ত কোনদিন…
বলতেও পারবো না তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে,
ভালোবাসি তোমায়!
হয়ত,আর কোনদিন…
ভোরের সূর্যের রশ্নির চাদর জড়িয়ে
হাঁটা হবে না বাকিটা পথ।
কিংবা শীতের সকালে!
যখন দু’জনে মিলে নগ্ন পায়ে,
শিশির ভেজা ঘাসে,
এঁকে দিতাম অস্পষ্ট মানচিত্র।
জানি,মহাকাল!
আর হয়ত;শিশির ভেজা পথে একসাথে হাঁটা হবে না আমাদের!
নগ্ন পায়ের পদচিহ্ন দিয়ে আঁকা হবে না,
কোনও অস্পষ্ট মানচিত্র।
মনে পড়ে মহাকাল
সেই অলস দুপুরের রৌদ্রদীপ্ত দিনগুলির
কথা।
আমি যখন ক্লান্তিতে অসহায়,
তুমি পাশে এসে বসতে;
আর বলতে আমায়।
আমার কাঁধেই না হয় একটু ঘুমিয়ে নাও।
তোমারই চোখের দিকে তাকিয়ে,
আমার একটা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস।
জানি,মহাকাল!
হয়ত,কোনদিন আর তোমার কাঁধে;
স্বস্তির দীর্ঘশ্বাসটুকু ফেলা হবে না আমার,
অলস দুপুরে।
জানি,মহাকাল!
হয়ত,পড়ন্ত বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে
লেখা হবে না কোনও মেঘ-কাব্য।
কিংবা কোনদিন চোখে বন্দী করতে পারবো না;
কোন গোধূলী বেলার ধূসর স্বপ্ন।
ক্লান্ত শরীরে যখন
আমার ঘরে ফিরে আসা;
হয়ত,তোমার মুখের হাসিটা দেখতাম
আর ভুলে যেতাম!
৯-৫ টার গন্ডির ব্যস্ত জীবনের,
কলুষিত নাগরিক ব্যস্ততা।
জানি,মহাকাল!
হয়ত,সন্ধ্যে নেমে এলে-
ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরবো,
হয়ত তোমায় দেখবো না।
হয়ত,আমারই চোখ দিয়ে লেখা হবে না
তোমারই মুখ-কাব্য।
কিংবা তোমার শীতল ঠোঁটে এঁকে দেওয়া হবে না,
কোন অপষ্ট আবেগের সীমারেখা।
হয়ত,দেখা হবে না
কোনদিন
রাতের আকাশে তারাদের মিলন-মেলা,
কিংবা লেখা হবে না
রাতের কোন গল্প।
রাত বাড়ছে!
ধীর পায়ে হেঁটে যাই,
শতবর্ষের কালের বির্বতনের সাক্ষী জমিনের বুকে গড়ে উঠা কবরটার দিকে ক্রমশ।
এপিটাফটা তখনও পড়ে আছে!
দীর্ঘশ্বাসের রংহীন ধূসর প্রতিযোগিতার স্পষ্ট প্রণয়।
এপিটাফের হরফগুলো যেন আমায় দেখে আর্তনাদ করে,
বর্ষণ করে একরাশ অশ্রু-কাব্য!
তারপর যেন কোথায় মিলিয়ে যায় এপিটাফের রংচটা দীর্ঘশ্বাসের প্রতিটা স্পন্দন।
চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে ক্রমশ!
মহাকাল…
বর্ণ থেকে শব্দ,
শব্দ থেকে বাক্য,
আর,বাক্য থেকে,
কয়েকটি মানে,তারপর জন্ম দিয়েছিল
একটি এপিটাফ।
যে এপিটাফে কোনও ভালোবাসার অন্তিম লাইন ছিল না,
ছিল প্রতারণার কাব্য।
সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম,
এপিটাফটা হাতে নিয়ে।
করে ছিলাম আর্তনাদ!
জন্ম দিয়েছিলাম মানেহীন দীর্ঘশ্বাসের।
এপিটাফের সামনে দাঁড়িয়ে!
তখনও রাতের আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছি,
একদৃষ্টিতে।
সাথে দীর্ঘশ্বাস আর মহাকালের এপিটাফ!
আমার দীর্ঘশ্বাস আর আর্তনাদ হয়ত মিলিয়ে যায় দূরে-বহুদূরে।
জানি,মহাকাল!
তুমি হয়ত অনুভব করবে না আমারই অযাচিত,
দীর্ঘশ্বাস!
রাত বাড়ছে…
ভোরের অপেক্ষায় থাকি।
এই তুমি হয়ত ফিরে এলে,
আমারই অযাচিত দীর্ঘশ্বাসের কাব্যে।

Add to favorites
1,860 views