কথন -
আজহার আহমেদ আজু
Published on: সেপ্টেম্বর 19, 2019
– কি হলো? আবার আরেকটা ধরালে যে?
-আচ্ছা এটাই শেষ। আর ধরাবো না।
– তুমি ইদানিং বড্ড বেশি সিগারেট খাচ্ছো তুলন।
– ওই আরকি। হয়ে যাচ্ছে।
-তুলন, কিসের এতো দুঃখ তোমার?
– আমার? আমার কোন দুঃখ নেই। আমার নিজস্ব কোন দুঃখ নেই। আসলে আমার কোন দুঃখই নেই। একটা সময়ে ছিলো। আজ নেই। এখন দুঃখ বেটা আমাকে দেখলে নিজেই কষ্ট পায়। বলেই ফিক করে হেসে দিলো সে। তারপর হাসি থামিয়ে এক মুহূর্তেই চুপ করে গেলো। একদম চুপ। তারপর নীচু গলায় বললো
– জানো লায়লা আমার ইদানিং শব্দ ভালো লাগে না। মানুষের কথা ভালো লাগে না। আমার পাখি ভালো লাগে। আচ্ছা ঈশ্বর আমাদের একটা চোখ আর একটা হাত কম দিয়ে এক জোড়া ডানা দিতে পারতেন না? প্রতিটা মানুষেরই জীবনে কোন একটা সময়ে একটা ডানার খুব দরকার পরে। আমার এখন এক জোড়া ডানার দরকার লায়লা।
একটা দীর্ঘশ্বাসে তুলন উঠে দাড়িয়ে পাঞ্জাবি ঝাড়তে ঝাড়তে বললো। চলো তোমায় এগিয়ে দিয়ে আসি। সন্ধে হয়ে এলো। উঠো। হাত দাও।
লায়লা আবার প্রশ্ন করলো,
– আচ্ছা, কি হবে ডানা দিয়ে?
– তোমায় নিয়ে চলে যাবো
– আমি কেনো?
তুলন চুপ। কোন কথা নেই তার মুখে। সিগারেটে পর পর দু’টো লম্বা টান দিলো সে।
লায়লার আবার প্রশ্ন।
– কোথায় যাবে?
– সাইবেরিয়া কিংবা গ্রীনল্যান্ড।
– বরফের দেশে?
– নাহ। শুভ্রতার দেশে। আমার মনে হয়। জগতের বেশিরভাগ সুখ ওখানে। কেউ নেই তেমন। বহুদূর পরে পরে কয়েকজন মানুষ, কাছের মানুষ গুলোর সাথে পুরোটা জীবন কাটিয়ে দেয়। এদিক দিয়ে তারা কত্ত সুখী ভাবতে পারো? বেশি মানুষ,বেশি সমস্যা। ইদানিং মানুষও ভালো লাগে না আমার। একদম সহ্য করতে পারি না। একটা এস্কিমোতে দুই হাত ডলতে ডলতে এক কাপ চা আর প্যাঙ্গুইন দেখে দেখে জীবন কাটিয়ে দেবো।
– যদি হাত না দেই? যদি না যাই তোমার সাথে?
– তবে আর কি একাই যাবো। হারিয়ে যাবো। আমার তোমাকে যতটা প্রয়োজন ততটা প্রয়োজন যদি তোমার আমাকে না হয় তবেই সব গন্ডোগোল পেকে যায়। তুমি কাছের মানুষ তোমার সাথে গন্ডগোল করতে চাই নে।
লায়লা হাত বাড়িয়ে দিলো। নরম সে হাত। তুলন তাকে আলতো করে টেনে তুলে নিলো। যেনো মনে হলো সে কোন প্রজাপতি ধরেছে। মেয়েটা একটু দ্রুত হেঁটে সামনে এগিয়ে গেলো একাই। তুলন তার সাথে তাল মিলিয়ে নিয়ে পাশে হাঁটতে হাঁটতে বললো এতো জোরে হাঁটছো যে? লায়লা বললো, কেনো? তুমি জোরে হাঁটতে পারো না?তুলন একটু হেসে নিয়ে বললো খুব পারি। আরো জোরে হাঁটতে পারি, এই দেখো। বলেই একটু সামনে এগিয়ে গেলো। মেয়েটা একটু প্রায় দৌড় দিয়েই আবার তাকে ধরে ফেললো। তারপর দুজনের সেকি কাচুমাচু হাসি।
তুলন হাতের শেষ সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বিরবির করে বললো,
“আমি আমার বদলে সিগারেট জ্বালাই। দুঃখ কষ্টকে ধোঁয়ার মতন উড়িয়ে দেই। এই নিকোটিন আমার ফুসফুসের কোন একটা অংশে যেতে পারে না। লায়লা, যেখানে আজো কিছুুটা ভালোবাসা বাকি”
– এই, বিরবির করে কি বলো?
– না কিছু না। আচ্ছা আজকে মাসের কয় তারিখ?
– আজকে ৩ তারিখ।
– ওহ। ৬ তারিখে বেতন পাবো বুচ্ছো। চলো দূরে কোথাও যাই।
– চলো।
– জানতে চাইলে না কোথায় নিয়ে যাব!
– নাহ! প্রয়োজন নেই। কিছু কথা তুমি জানলেই হবে।

Add to favorites
908 views