নও তুমি প্রভু মুসলমানের,
নও তুমি প্রভু হিন্দুর।
তুমি যে আমার শোণিতের সখা
প্রতি কণা,প্রতি বিন্দুর।
কে বলে তোমারে সাকার হে প্রভু,
কে বলে তোমারে নিরাকার?
প্রতি প্রাণ মাঝে তব বিরাজন,
তুমি বহুরূপী, সবাকার।
তুমি গিরি-মহাগিরি,উছল তটিনী
তুমি ধুলি কণা ধরণীর।
তুমি মহাবলী বায়ু,ঘন সিয়া মেঘ,
ছল ছল ঢেউ বারিধির।
তুমি শৈল তনয়া,চন্দ্র-সূর্য,
তুমি দিবা,তুমি রাতি।
তুমি অসীম আকাশ,অঙ্গে যাহার
খচিত তারকা ভাতি।
তুমি বুলবুল,গুল,সবুজ পাতার
হৃদয় মাতানো সুমাধব।
তুমি দেয়া ঘন কালো,যুবতী বরষা,
জল ছল ছল কলরব।
তুমি শক্তিমত্ত,দাহনলাগা সে
গ্রীষ্ম ঋতুর খরা।
তুমি তুষারের কণা,কুয়াশা চাদর,
হিম লাগা শীত,জরা।
তুমি তরুণ প্রেমিক, তার ভালবাসা,
বাহুর বাঁধন সুনিবিড়।
তুমি দিলনাশী ঐ চকিত চাহনি
হরিণী নয়না ষোড়শীর।
তুমি জলকেলিরত রুপসী কুমারী,
ফারসী কবির উপমা।
তুমি ব্যথিত
হৃদয়ে তিলে তিলে গড়া
বিরহীর প্রাণ প্রতিমা।
তুমি আনাল হকের নকশা আঁকানো
মনসুরের সে রক্ত।
তুমি শুঁড়িখানা মাঝে মদে চুঁর
চুঁর
শরাবী হাফিজ ভক্ত।
তুমি আরিফের বীণা,মদিরা মহিমা,
শরাবী গজল হরদম।
তুমি গুলের গোলাবী পাপড়ির পরে
ভোরের শিশির শবনম।
তুমি রুমী,জামী,রবি,হাফিজ, খসরু
অমৃত হিয়ার উপাসক।
তুমি বৃদ্ধ ওমর,তুমি শেখ সাদী
মহাজ্ঞানী নীতি প্রচারক।
তুমি হেরা কন্দরে আরব দুলাল,
মগ্ন সে ধ্যানী বুদ্ধ।
তুমি শান্তি নিবিড় ধুলার ধরায়,
তুমি প্রেম, তুমি যুদ্ধ।
তুমি রামকৃষ্ণের উগ্রচন্ডী,
কালীমাতা,তুমি ক্ষুদ্র।
তুমি স্বামী বিবেকের মহাদেব শিব
গঞ্জিকাসেবী রুদ্র।
তুমি ভক্ত নিমাই,গোলোক বিহারী,
নানক,কবির,মহাবীর।
তুমি কনফুসিয়াস,জরথুস্তর
মহা উপাসক অগ্নির।
না জিনে তোমারে,না চিনে
তোমারে,
করিয়া তোমারে অপমান,
চুমিতেছে যারা জিন্দাবেস্তা,
বেদ,বাইবেল,কোরআন।
তব নিস্ফল পূজা করে যারা,
করেিছ তাদের প্রতিবাদ।
তাই তারা মোরে বলিয়াছে পাপী,
কািফর আর মুরতাদ।
দেখেনি তো তারা তোমার মূরতি
হিয়ার অন্তরালে।
ভ্রমেতে পড়িয়া ভ্রমিতেছে তারা
লাভ ও ক্ষতির জালে।
নামাজে-পূজায়,পাইনি তোমায়,
হে প্রভু,হে জগস্বামী।
মানব দেবেরে পূজিয়া তোমার
দীদার পেয়েছি আমি।
তুমি মহারাজা, তব পাক নামে
সৃষ্ট এ দুজাহান।
তোমার প্রেমের মদিরে তৃপ্ত
জগতের সব প্রাণ।
জগতের প্রতি দৃশে তুমি সখা,
প্রকাশিছ আপনারে।
প্রতি যুগে যুগে লুকায়ে রয়েছ
মানবের অন্তরে।
এই হৃদয়ের আঁখি দিয়া তব
রুপ হেরিয়াছি আমি।
শুধানু তোমার পরিচয়, তুমি
উত্তর দিলে,”তুমি”।

Add to favorites
1,865 views