জীবনচক্র ৬ -
এইচ বি রিতা
Published on: জুলাই 3, 2013
কতদিন ধূয়া উঠা গরম ভাত দেহিনা চোক্ষে! লগে ইলিশ ভাজা। আহ ! আগে কি সুন্দর দিন কাডাইতাম …। সকিনার বাপ আর আমি এক লগে খাইতাম। নিজের পাতের থেইকা আমার গরম ভাতে,মাছের ভাজা আর শুকনা মরিচ ডাইলা দিতো। আমি খাইতাম।
আজ বহু বছর আমারে কেউ এমুন কইরা বাইরা খাওয়ায়না। খিদার জন্যে ঘুম আহেনা। মাঝ রাইতে পেট কামড়ানি দেয়। খিদার জ্বালা বড় জ্বালা।
মাইনষে আমারে খাওন দেয়না। কয় জটওয়ালী পাগল। গায়ে গন্ধ-চুলে জট, আইশটা কাপর। আমারে দেখলেই সবাই ইটা নিয়া দৌড়ায়। গরম ভাতের মার ছুইড়া দেয় গায়ে।
অনেক বছর আগে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, আমার সকিনারে পাক হানাদারগর স্থানীয় দোশর রাজাকাররা ধইরা নিয়া তুইলা দিসিলো পাক সেনা গর হাতে। সকিনার সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাইচা গেসিলো মীর্জানগরের বহুত মাইনষের প্রাণ। আমি কইসিলাম, “মা রে আল্লাহর নাম লইয়া যা। জীবন কোরবানী দে,দেশ স্বাধীন হোওক”। মাইনষে আমারে হেইদিনই কইসিলো পাগল। কইসিলো তুই মা না, তুই মানুষ না। তুই ডাইনী!তুই পাগল!
আমি হেইদিনই পাগল হইসিলাম।
সকিনা আমার ফিরা আইসিলো লাশ হইয়া। ছিড়াবিড়া খাইসিলো হেরা আমার সকিনারে। আমি হেইদিন আবার পাগল হইসিলাম।
সকিনার বাপ গেসিলো যুদ্ধে। আর আইলোনা ফিরা।
ঘর গেলো, ভিটা গেলো, স্বামী-কন্যা সব গেলো। এক কাপরে গেরাম ছাড়া করলো। হেইদিন আবার পাগল হইলাম।
যেদিন শহর গেলাম, খাওন দিবো কইয়া এক স্যার রাইতের বেলা গাড়ীতে কইরা তুইলা নিলো। সকালে আবার ছাইড়া দিলো খাওন না দিয়া। সারা রাইত আমারে খাইলো। আমি হেইদিন ও পাগল হইসিলাম।
আইজ যহন দেহি ক্ষমতায় বসা রাজাকারের গলায় ফুলের মালা, তহন আমি পাগল হই। যহন দেহি রাজাকারেরা বাংলার পতাকা হাতে ঘুরে, তহন আবারো পাগল হই। যহন পাকিস্তানের খেলা দেইখা আমাগর পুলাপান ”পাকিস্তান জিন্দাবাদ” কইয়া চিক্কুর দেয়, তহন আবার পাগল হই।
খিদা লাগলেই পাগল হই।
হুদাই পাগল হই। সারাদিন রাইত খালি পাগল পাগল লাগে।
মইদ্ধে মইদ্ধে মুন চায়, চুরী করি। এক থাল গরম ভাত। ইলিশ মাছ ভাজা। কয়ডা শুকনা মরিচ।
পেট এ বড় খিদা। আইজ কয়দিন খাইনা।