ডার্ক এভিল সুইসাইডল নোট ২ -
এইচ বি রিতা
Published on: মার্চ 10, 2016
ভীষণ স্বস্তিতে মন আচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে! মনে হচ্ছে বেঁচে গেলাম! কি ভয়ানক এক সুপ্ত জ্বালাময়ী শিকড় গজিয়েছিল ভিতরে! দিনরাত কেবল শুষে নিচ্ছিল বেঁচে থাকার সকল উপকরণ!
তারপর! তারপর মনে হলো বেঁচে থাকা নিরর্থক। বেঁচে থেকে কি হয়? রোজকার মত একি নিয়মে সকাল হতে রাত অবধী ছুটে চলা। একই নিয়মে মিথ্যের বুলি, হেসে খুন, একই নিয়মে সমঝোতা; উল্লাস! কিসের টানে মানুষ বেঁচে থাকে তবে? প্রতি প্রভাতে, জাগতিক নিয়মের বলি হতে ভাল লাগছিলনা!
দিলাম হাত-পায়ের সকল রগ গুলো কেটে। তরতর করে লাল খয়েরী রক্তপ্রপাত ছুটে গেল শরীরের মায়া ছেড়ে মেঝেতে! আহ! কি আনন্দ!
সে আমায় প্রতিদিন একবার করে ভাঙ্গতো, আবার গড়ে দিত! ভাঙ্গা গড়ার খেলায় আমি শিশুটির মত হাত জোর করে কাঁদতাম। বলতাম, শোনছো? ব্যাথা হয়! খুব হয়! এবার ক্ষ্যান্ত হও!
সে হাতুরীর শব্দে ঠকঠক করে কষ্ট পেরেক ঠুকেই যেত। এক সময় মনে হতো, দৌড়ে পালাই। মনে হতো ঘার হতে মাথাটা কেটে হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেলি দুরে! চট করে মাথার যন্ত্রনা শুরু হতো, মনে হতো ইট পাথরে কেউ মাথাটা থেঁতলে দিক!
মানুষের গন্ধ কটু লাগছিল! ভালবাসার ফুলগুলো ভুল মনে হতে লাগলো। কারো চোখে প্রণয় দেখলেই ভয় হতো! মনে হতো, ওই চোখ আমায় শুষে নিচ্ছে! বহুবার আগেও দেখেছি ওই চোখ! রক্তপিঙ্গল ও চোখ বহুবার আমার খুন করেছে, হৃদয়ে পেরেক ঠুকে দিয়েছে! আর নয়, এবার বিদ্রোহ ঘোষণার পালা;এবার পালানোর পালা!
মাঝে মাঝে একদম একা হয়ে যেতাম! নিজের ছায়া দেখেও চমকে উঠতাম। দূরে কোথাও গান বেজে উঠলে, অস্থির লাগতো! পাখির ডাকে কানে জ্বালা ধরাতো। কোলাহল ছেড়ে নদীর পাড় ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা হেটে যেতাম। নদীর জলে নিজের মুখাবয়ব দেখে মনে হতো, এ কে? চেনা চেনা লাগছে খুব!
বুঝতে পারছিলাম, আমি তলিয়ে যাচ্ছি! কোথাও না কোথাও কিছু তো হচ্ছে! কি হচ্ছে? কোথায় হচ্ছে?
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে মনে হতো, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। টুপটুপ করে মগজ গলে পরছে মাটিতে! কি যে ব্যথা…! কি যে অসহনীয় ব্যথা হতো!
মাথায় হাত চেপে হাটু গেড়ে মাটিতে বসে পরতাম। চিৎকার করে ধরনী কাঁপিয়ে দিতাম! হামাগুড়ি দিতে দিতে ঈশ্বরকে ডাকতাম,
হে ঈশ্বর! আমার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আমার মগজ গলে পরছে! কষ্ট হচ্ছে ঈশ্বর,আমায় ক্ষমা করো! আমায় মুক্ত করো!
ঈশ্বরের কানে আমার চিৎকার পৌছাতো না!
কি করার ছিল আমার? বেঁচে থাকা অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। তারপর! তারপর চলে এলাম সকল বন্ধনের উর্ধ্বে। দিলাম শরীরের সকল বন্ধন খুলে!
আচ্ছা, যতটা সময় ঈশ্বর আমাকে দিয়েছিলেন, ততটা সময় কি আমি বেঁচে ছিলাম?
শিরা উপশিরাগুলো নিস্তেজ হয়ে আসছে। আমি মারা যাচ্ছি। কি ভয়ংকর অনুভুতি! যেতে যেতে পিছন ফিরতে ইচ্ছে করছেনা! কারো জন্য মায়া হচ্ছেনা! কি অদ্ভুত! মৃত্যুকালে বুঝি মায়াও মানুষের সঙ্গ ছেড়ে দেয়! মৃত্যুবেদনা কি তবে আমাকে পৃথিবীর প্রতি অনাসক্ত করে তুলেছে? একদিন থেকে যাওয়ার আসক্তিতে কতনা আকাঙ্খার জারজ বীজ বুনে ছিলাম পৃথিবীর বুকে! বড় হাস্যকর!
মৃত্যুকে এত কাছ থেকে আগে কখনো দেখা হয়নি! মৃত্যুর চোখের দৃষ্টি যেন ঘুটঘুটে অন্ধকার,যেন এতদিন আমারই খোঁজে ঘরের কোনে কোথাও মুখ বুজে পরেছিল! আজ মনে হচ্ছে, মৃত্যুর মধ্যদিয়ে বিশাল শূন্যতাকে আলিঙ্গন করছি! আহ! মৃত্যু এত কাছে আজ!
শূন্যে তলিয়ে যেতে যেতে আজ মনে পরে, কতদিন আমি ঘুমুইনি! কত রাত কেবল ছটফট করে কাটিয়েছি! আজ ঘুমুবো। আজ মগজে কোন অনুভুতি নেই, কোন রক্তক্ষরণ নেই! আজ আমি ঘুমুবো!
যেতে যেতে অরণ্যকে সাক্ষী রেখে যাই, আঁধারের দেয়ালে আমার অসহায়ত্বকে লেপ্টে দিয়ে যাই! যেতে যেতে ঈশ্বরকে বলে যাই, এইখানটাতে এক মানবী ছিল, অযতনে বহুকাল মাটি খামচে ছিল!

Add to favorites
2,024 views