দশটি কবিতা -
হিরণ্য হারুন
Published on: ডিসেম্বর 30, 2016
কম্পাইলার
❑
গভীর বনে কাঠুরে হাঁটছেন
তাঁর অবসাদ নেই, ক্লান্তি নেই। আরো গভীর বনে যেতে হবে
যেতে যেতে কাঠুরে বললো, তিনি বৃক্ষদের ভালোবাসেন।
পথিক হাসলো
বৃক্ষরা নিশ্চুপ
পাখিরা আকাশে উড়ে গ্যালো
দূর হতে জমি আকাশকে ইশারা করলো।
বৃষ্টি নামলো।
কাঠুরে কাঠ কেটে বাড়ি ফিরলো।
নতুন মৌসুমে অনেকগুলো চারাগাছ গজালো…
১৬.১২.১৬
●
লিপিবদ্ধ নদীর সঙ্গীত
❑
ডায়েরির পাতাগুলো আরো একবার উল্টে দেখি–
কিছুই নেই, শুধু অর্থহীন স্মৃতি
সময়ের ঋণে ঘুমিয়ে আছে কিছু স্রোত
কখনো কি দেখেছো ডায়েরিতে জমিয়ে থাকা শেষ দৃশ্যটুকু
নিমেষে নিঃশেষে তারার গহীনে জমিয়ে থাকা জল।
সীমানার বাঁধ ভেঙে আড়াল হয়েছে দিগন্ত
দীর্ঘভ্রমণ শেষে ক্লান্ত রজনী–
শূন্য হতে ডায়েরিতে জমানো মহাক্ষণ।
সংযোগ সূত্রের গুরুমন্ত্রে
বিভাজন সূত্রে অমীমাংসিত শেষ নেশার অস্তিত্ব
কোথায় কেউ নেই, পাওয়া গেলো না কোন চিহ্ন
ডায়েরিতে আছে কিছু দাগ– চিহ্ন নয় গোলকধাঁধায়
হারানো কিছু পথ
পথে পথে ধুলোর ভিতরে হারানো নদীর সঙ্গীত
প্রতিফলিত হচ্ছে বহুদূরে ডায়েরি স্মৃতিতে–
সম্পর্কহীন সময়ের তান্তুলে…
০৬.১২.১৬
●
শরণার্থী
❑
অন্ধকার রাতে দু-একটা তারা গুনি
তারা শব্দে হেঁটে চলি অজানা পথে─ সমুদ্রের উপকূলে জাহাজ আসে
আমরা নৌকাতে ওঠি
সমুদ্রপথে শুয়ে আছে নিমগ্ন বাতাস─ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে বলে
পিছনে বারবার ফিরে দেখি
দূরের মাতৃভুমির হাহাকার─ ধর্ম যুদ্ধে সে জাহান্নাম।
ক্রান্তি আর ক্রান্দন
চোখের কোণায় জল।
ওরা আমাদের মানুষ ভাবেনি─ ভেবেছে ধর্মের গোলাম।
কুকুরের বিলাপ শুনতে শুনতে
গগন ভেঙে পড়ে মাথায়
অমানুষের সাথে বাস করুক ধর্মের ঈশ্বর
আমরা চললাম অজানা গন্তব্যপথে─ বেঁচে থাকার পথে
হয়তো চলার পথের হবে সলিল সমাধি
আমরা থামবো না
তবু মন ফিরে ফিরে চায়
ওগো মাতৃভূমি,
তোমাকে কখনো ভুলবো না
জন্মেছি তোমার কোলে বারবার স্মৃতি হয়ে
ফিরে আসবো তোমার কাছে
সেই রেখে যাওয়া নাড়ী স্মৃতিচিহ্ন ভুলে যাওয়া নয়।
১২.১১.১৬
●
আমার বাবার বাঁশির সুর
❑
বাবা মাঝে মাঝে রাতে বাঁশি বাজাতেন
অন্ধকার রাতে সুর ছিলো আঁকড়ে ধরা, সূক্ষ,
অন্তরের গভীর কম্পন।
আমি শুনতাম মাঝে মাঝে– গভীর রাতে, একা একা…
দূর হতে ভেসে আসা এক অনুভূতি: প্রজ্ঞা।
জ্যোৎস্নার রাতে বাবা বাঁশি নিয়ে বসে থাকতেন
–গভীর রাত অবধি
আমি, দিদি ঘুমাতে গেলে বাঁশির সুর তুলতেন
বর্ষার বৃষ্টিস্নাত চাঁদনি রাতে
সেই সুরে খুন হয়ে যেত কত নারী !
দিগন্তরেখায় পবিত্র পাখি ফিরিয়ে আনতো জীবন।
গভীর রাত,
ভোর অবধি, মা– বাবার বাঁশি সুর শুনতেন…
১৩.০৯.১৬
●
বদ্ধ বিশ্বকোষ
❑
রোজ রোজ ফিজিক্স পড়তে আর ভালো লাগে না
মাঝে মধ্যে মনে হয় বিদ্রোহ ঘোষণা করি— তারপরও
কখনো কখনো হাসকর মনে হয় জীবনটাকে।
শিশুকালে পড়লাম ধর্মের বাণী
কিছুক্ষণ আগে পড়লাম বায়োলজিতে বিবর্তনবাদ
কিন্তু দুঃখ জয় করে যে ঘর বাঁধলাম
বিপর্যস্ত উপকুলে— প্রিয় ঘরে ঘুমিয়ে আছে নারী।
স্মৃতিভ্রংশ চেনে নেয় দুই একজনকে স্বপ্নে
যোজন যোজন দূরে কেউ একজন পাঠ করে’ বনলতা সেন’।
আমি ছুটে চলি রেললাইন ধরে— ছমছম অন্ধকারে একটা ট্রেন ছুটে চলে
চারপাশে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দে— অঙ্কুরিত হয় শস্য,
আমি হিসাব করলাম বিন্দু
আর্কিমিডিস ঘোষণা করলো বৃত্তের কথা।
গভীর রাত
বউ এসে ডাকলো
তখনও বাকি ছিলো ক্যালকুলাসের নিবনীজ থিউরাম;
নিঃশব্দে গাছের দুই একটা পাতা ঝরে পড়লো।
দিগন্ত বৃত্তে ধর্মঅন্ধকার—
পড়ে আছে ফিজিক্সের জ্ঞান, গণিতের সূত্র, বায়োলজির বিবর্তন
রক্ত ঝরে, জল অবিরল— ধর্মঅন্ধকারে নিভে আসছে আলো….
২৬.০৮.১৬
●
জীবন প্রবাহ
❑
জলতরঙ্গে ভেসে ভেসে
আদিম কোন জেলে বেশে
অস্তিত্বে শীতনিদ্রায় বেঁচে থাকার স্রোত
আস্ত জীবন খরচ ক’রে সে’কি দোড়-ঝাঁপ
সহজ কান্না আড়াল ক’রে
সজোরে হাসতে হাসতে
অনাগত প্রজন্মের সতর ঢেকে
ভেসে বেড়াই ভূতুড়ে অস্তিত্বে মাতাল স্বপ্নে
জীবনধারা আর কিছু দৃশ্যে
খসে খসে পড়া যৌবনের তাপে পাপে
সাদা-কালো স্বপ্ন এক বিছিন্ন শক্তি
জল ছিদ্র নৌকা অনন্ত শূন্যের পথে
কোমল নিশ্বাস, কোমল বিশ্বাস, আলো জ্বলে-নিভে
বহু দূরে নিখোঁজ সমুদ্রে…
০৩.০৭.১৬
●
সাইক্লয়েড়
❑
ক্ষুদ্র ফাংশনে, অবিছিন্ন ব্যবধিতে
নিভৃতে নিঃসঙ্গে নিজেকে বিলিয়ে
ফেরারি পাখিরা যায়-আসে
খুঁজে নেয় নিজস্ব নীড়।
কালপুরুষ সমুদ্রের বুকে সাঁতারায়
জড়ো হয় তৃষ্ণার খনি;
দিগন্তের দুঃসাহসিকতায় স্পর্ধিত আলো
রক্ত অরক্ষিত কয়েকটি ফুল
জড়োসড়ো হয় প্রবাল দ্বীপে।
পৈঁসু বিন্যাসে বিন্যাস্ত দ্বিপদী
সূচক

Add to favorites
956 views