নূর হোসেন -
এইচ বি রিতা
Published on: জানুয়ারী 30, 2015
ইতিহাস চিরকালই রক্তস্নাত গালিচায় রক্তপিপাসু এক দলিল
সেই দলিলের মাঝামাঝি ক্ষয়ে যাওয়া এক পৃষ্ঠার নাম
সাথে জাতির চিত্তে ছিল সেদিন একটি লক্ষ্য –
দারিদ্রতায় জর্জরিত নূর হোসেন গনতন্ত্র রক্ষায় সেদিন
রক্তকরবী হয়ে ফুটেছিল জাতির ঝিমিয়ে পরা মস্তিষ্কে।
মৃত্যুরঙা সাদায় কালো চামরায় কি মিহিন কারুকার্য
“স্বৈরাচার নিপাত যাক, গনতন্ত্র মুক্তি পাক”
আইনের ক্রীতদাস খাকি রঙ্গা রোবটের নিশানা হয়ে উঠলো নূর হোসেনের শৈল্পিকচিত্র
অতঃপর গনতন্ত্রের পুনরুদ্ধার
স্বৈরশাসন মুষ্টিবদ্ধ হাতে নূর হোসেন মিশে গেল মেদুর মেঘমালায়।
নূর হোসেন আজ বেওয়ারিশ লাশ
মাটি চাপা পরে আছে বহুবছর; হয়তো এভাবেই রয়ে যাবে অনাদিকাল
মৃত্তিকার গায়ে আক্ষেপ মেখে লিখে যায় হাজারো অপঘাতে নিহত সৈনিকের কথা
তাদের গায়ে খামচে দাগ কেটে খোদাই করে লিখে,
“সকল জীবন বেঁচে যাক, গনতন্ত্র মুক্তি পাক”
সময়ের প্রেক্ষাপটে ইতিহাস বদলে যায়
শাসক বদলায়, শাসন বদলায় না।
ইতিহাস বলে স্বৈরতন্ত্র শেষ হয়েছিল
গনতন্ত্র কি সত্যিই এসেছিল?
তবে কেন আজ এত সন্ত্রাস-হানাহানি
ক্ষমতার লড়াইয়ে ক্ষুধার্ত কুকুরের ন্যায় ছিন্নভিন্ন গনতন্ত্রের অস্তিত্ব?
তবে কেন আজ মানুষ মরে, মানুষ পোড়ে
গনবিরোধী শক্তির কাছে গনতন্ত্র বিধ্বস্ত?
সময় পরিক্রমায় আজ মৃত্যু সহজলভ্য
এক নূর হোসেনের আত্মত্যাগে স্বৈরশাসন নিপাত হয়েছিল
আজ হাজারো নূর হোসেন পথে ঘাটে গুলিবিদ্ধ
উড়ে যাচ্ছে দমকা হাওয়ায় মাথার খুলি
চতুষ্পদি তৃতীয় শক্তির সুকৌশলী তীর্যবেক্ষন
উৎকন্ঠিত জনতার দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর।
আজ গণতন্ত্র মানেই হাজারো নূর হোসেনের বেওয়ারিশ লাশ
এখন সংগ্রাম আছে, বিকার নেই
এখন মৃত্যু আছে, স্বীকৃতি নেই।
আজকের নূর হোসেনরা কেবল বার বার হেরে যায়
গনতন্ত্র ভেসে যায় লাশ হয়ে পদ্মার জলে
গনতন্ত্র কাঁদে, কাঁদে নূর হোসেন
ইতিহাস কাঁদে! কাঁদে বাংলার মাটি-বৃক্ষ-তরু-নদী!
আমরা আর কোন নুর হোসেন চাইনা;
এক নূর হোসেনই হয়ে থাকুক বাংলার শেষ জাতীয় শহীদ।
কাঁদে মানুষের ভিতর মানুষ।
বাংলার মানুষ স্বৈরতন্ত্র দেখেছে, গনতন্ত্রের পুনরুত্থান দেখেছে
কালে কালে বারুদের তুপে ছুড়ে দিয়েছে দেয়াশলাই
আজ আবারো সে বারুদের গায়ে অগ্নিলিখন অত্যাবশ্যক।
ইতিহাস কখনো কাউকে ক্ষমা করেনি
প্রবল একটা প্রলয়ংকরী ঝড় আগমনের অপেক্ষা কেবল
জীবন্ত পোষ্টার হয়ে দেয়ালে গেঁথে যাওয়া নূর হোসেন
তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে তলিয়ে যাবে চির নিদ্রায়।