পালাবদলে মাঘ আসে -
এইচ বি রিতা
Published on: আগস্ট 25, 2017
ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদী সদরের বৌয়াকুড় এলাকায়। একজন বৃদ্ধা নারী, গত সপ্তাহে তিনি নির্যাতীত হয়েছেন তার ছেলে বউ দ্বারা। ছেলের বউ তাকে বুকে চড়ে ঘুশিযে, খামচিয়ে বেদম প্রহার করেছেন। ডায়বেটির রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধা গিয়েছিলেন চা বানাতে। হাত খেঁপে চা পাতিল পড়ে যায় মেঝেতে । এ নিয়ে ছেলের বউ কটাক্ষ শুরু করেন। বৃদ্ধা ও নাছোড়! তিনিও পাল্টা জবাব দেন। কথার পিঠে কথা বাড়তে থাকে। একসময় ছেলের বউ রাগান্বিত হয়ে চড়াও হোন শাশুড়ীর উপর।
সব দেখেশুনে বৃদ্ধার ছেলেও আত্বীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ অত্যাচারী মেয়েকে তারা ঘরে ফিরিয়ে নেবেন না। বলা বাহুল্য, মেয়েটির দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও ঘৃণ্য। প্রথমতঃ কোন অবস্থাতেই একজন মানুষ আরেকজন মানুষের গায়ে হাত তোলার অধীকার রাখেননা! দ্বিতীয়ঃ শাশুড়ী হলেন নিজ মায়ের অল্টারেশন। বাদ দিলাম অল্টারেশন, যে পুরুষটিকে আপনি প্রতিদিন ভোগ করছেন, সে পুরুষটির জন্মদানকারী জননীকে, আপনি ভাল না বাসুন, অন্তত তাকে অপমান, অবহেলা করার অধীকার আপনার নেই। কেন বললাম “ভাল না বাসুন”? অনেক এমন শাশুড়ী রয়েছেন যারা যৌতুকের জন্য ছেলেকে সাহায্য করেন তাদের বৌকে পুড়িয়ে মারতে! এমন শাশুড়িও রয়েছেন, কথায় কথায় যারা ছেলে বউ পিটান। আবার অনেকেই নানান কুকর্মেও নিজ ছেলের পক্ষপাতীত্ব করে উল্টা ছেলে বউকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে থাকেন। আমরা ফেরেশতা নই, আমরা মানুষ। আমরা এখনো এতটা উদার হতে শিখিনি যে এ সকল অত্যাচার সয়েও শাশুড়ীকে ভালবাসবো! তবে হ্যা, ভাল না বাসলেও ক্ষতি নেই, কিন্তু শাশুড়ীকে খাওয়া-পড়ার কষ্টসহ তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, অবহেলা করা, অযত্ন করা, কোন অবস্থাতেই গ্রহনযোগ্য নয়।
ভুলে গেলে চলবেনা, জীবনচক্র চক্রাকারে ঘুরে। আজ একজন মায়ের সন্তানের বুকে আপনি পরশ সুখ দিয়ে তাকে তার মা ভুলি্য়ে রাখলেন, কাল অন্য কেউ আপনার সন্তানের বুক পুরোটাই দখল করে নেবে। সেখানে আপনার জন্য কোন স্থান বরাদ্দ থাকবেনা।
শুরুতেই বলেছিলাম কর্মফলের কথা। যদিও অনেক ক্ষেত্রে “কর্ম” ছাড়াই আল্লাহপাক তার বান্দাদের “ফল” ভোগ করান, তবু কর্মফল সবারই ভোগ করতেই হয়।
যে বৃদ্ধাটির কথা বলছিলাম, ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে তিনি যে খুব সহনশীল, পরোপকারী, দরদী, মানবিক, নৈতিক ও উদার ছিলেন, তা কিন্তু নয়! মানুষের মনে আঘাত করে কথা বলা, অন্যকে হেয় করা, কুটিলতা, পক্ষপাতীত্ব সবই ছিল তার মধ্যে। যে ছেলের বউ দ্বারা নির্যাতীত হযেছেন তিনি, সে ছেলের বউকেই বেশী আদর করতে গিয়ে অন্য ছেলের বউকে তিনি অপদস্ত করেছেন মানুষের কাছে সবসময়, তার ভালটাও কখনো স্বীকার করেননি। নিজ ছেলে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে অর্থ যোগান দিয়েছেন, তিনি সব ঢেকে রেখেছেন। বড় ছেলের ঘরের নাতনীদের বিয়ে দেন, তারপর নাতনী নিয়ে নাতনী জামাইকে তার পরিবার হতে আলাদা হতে সকল কুপরামর্শ তিনিই দিয়ে থাকেন।
পরিনামে তিনি কি পেলেন? আল্লাহর সন্তুষ্টি? মানুষের সন্তুষ্টি? নিজ পরিবারের সন্তুষ্টি? নাহ! কিছুই পাননি। পরিনামে যা পেলেন, তা প্রকাশ্য; অলরেডি বর্ণনা করেছি। আর বৃদ্ধাকে পরিনাম দানকারী ছেলের বউ ও তার পরিনাম ভোগ করবেন আগামীতে। জীবন চক্রাকারে ঘুরে।
নিজেকে ভালবাসুন। পরিবার, মানুষ, সম্পর্ক, দায়ীত্ব-কর্তব্য…সব কিছুর প্রতি মানবিক হোন, উদার হোন। পরিনাম ভাল না হলেও খারাপ হবেনা।