পোনা নদী -
আসাদুজ্জামান শাওন
Published on: জুলাই 15, 2017
পোনা নদী
আসাদুজ্জামান শাওন
————————————————–
ছোট্ট একটি শহর – শহরের কোল ঘেঁষে প্রবাহিত স্রোতস্বিনী নদী
চির যৌবনাবতী সে – নাম তার “পোনা নদী”
তার দু’কূলে স্পষ্টত সর্পিল মেঠোপথ,পথের ঠিক দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অজস্র বৃক্ষরাজি,
ছায়া সুনিবিড় ঢাকা পথ।
পাতার ফাঁক দিয়ে গলে পড়া হলুদ রোদ,হলুদ রোদে পুড়ে যাওয়া নদীর চরে জেগে উঠা সবুজ ঘাস!
অদূরের ঢেউ খেলানো ধানক্ষেত,আঁকা ছবিতে দেখা দূরবর্তী গ্রাম।
এ নদীকে কেন্দ্র করে আমার শৈশব – শৈশব স্মৃতি
এর পাড়ে দুরন্ত দস্যিপনা,আড্ডা, কবিতা ও মুখরিত জীবন – নদীর পারে কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষতল।
নদীর স্বচ্ছ-ঘোলাটে জল বস্তুত আয়না;নদীর জলে নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি,
জোয়ার-ভাঁটা ঢেউয়ের দৃশ্যপট,ঢেউয়ের কলকল শব্দের মোহগ্রস্ত ধ্বনি-প্রতিধ্বনি;
ভেসে চলা পালতোলা নৌকা দূর-দূরান্তের জলপথ,
বৃদ্ধ মাঝির কন্ঠে সুমধুর ভাটিয়ালি গান।
এপার-ওপার সকাল-সন্ধ্যা নৌকা পারাপার
বয়ে চলা নদীর বুকে দু’পারের মানুষদের মধ্যে অদ্ভুত মেলবন্ধন।
মাছরাঙার মাছ শিকার!জেলেদের ব্যস্ততা – মাছ নিধনের নিত্য প্রতিযোগিতা।
প্রভাত বেলা – নদীর বুক চিড়ে বেরিয়ে আসা সূর্য;রক্তিম সূর্যোদয়,
সূর্যের আলোকরশ্মিতে বিদ্ধ নদীর জল,চিকচিক রূপালী আভা।
দুপুরের রোদে ঝলসে যাওয়া স্রোতস্বিনী তামাটে রংয়ের জল;রোদ-ছায়ার লুকোচুরি,
বিকেল বেলা – শান্ত নদীর জলে প্রতিবিম্ব মেঘ,মেঘেদের যাতায়াত দৃশ্য অবলোকন;
গোধূলি লগ্ন – গোধূলি বর্ণে আঁকা নদী,দক্ষিণের মাতাল হাওয়া;
সন্ধ্যে বেলায় ঘোলাটে জলে ডুবে যাওয়া সূর্য – সূর্যাস্ত
রাত – নিস্তব্ধ নির্জনের কোলাহল,অন্ধকারে নদীর অপরূপ আঁধার;
পূর্ণিমার আলোর জলছাপ,খসে পড়া তারা ভরা অন্ধকার আকাশ।
গ্রীষ্মের সূর্য – নদীর শরীরে রোদের শাসন
বর্ষাকাল – কালো আকাশ থেকে মুখ থুবড়ে পড়া বৃষ্টি ফোঁটা
টুপটাপ জলে সৃষ্ট আবহ যেন রমণীর পায়ের মল।
ঝাপসা ওপারের ঘন সবুজ অরণ্য!
বৃষ্টি শেষে নদীর জলে রংধনুর সঙ্গম।
স্রোতস্বিনী নদীর চরে শরৎতের ঘুমিয়ে পড়া,হেমন্তের পশ্চিমের হাওয়া,
শীতের হিম-শীতল স্পর্শ উত্তরের হাওয়া,কুয়াশায় ঢাকা চিরচেনা নদী – নদীর জল,বসন্তের আগমন – ছয়ঋতু।
পোনা নদী যার একদিকে ভাঙ্গে আর অন্য দিকে গড়ে – জাগতিক আদিম নিয়ম
তবুও এ নদীর সৌন্দর্য স্বর্গতুল্য,বিমোহিত হই বারংবার,
প্রভু!অনন্তকাল এ নদীর দৃশ্য আমার দু’চোখে এঁকে দিন আমৃত্যু।

Add to favorites
1,081 views