প্রবাহমান জীবন ও কিছু কথা-পর্ব ২ -
এইচ বি রিতা
Published on: জুন 1, 2015
পৃথিবীটা সত্যিই বড় বৈচিত্রময়!
এখানে টম ক্রুজ, বিল গেটস, আইন্সটাইন, মরণ কাকুরা একই বৃত্তে বাস করে। প্রথম তিন জনের কথা ভাবলে, নিজের জীবনটা অর্থহীন মনে হয়। শেষের জনের কথা ভাবলে মনে প্রশ্ন আসে, কার পূন্যের কারণে এতটা ভাল আছি? নিজের অর্জন বলতে তো এ জীবনে কিছু রঙিন ছাপের কাগজ আর তার বিনিময়ে একটা চাকরি। পূন্য বলতে যা বোঝায় তার কিছুই তো করা হয়নি।
আমাদের চাহিদার অন্ত নেই। পূর্ণতার পরই অপূর্ণতা দু’হাত বাড়িয়ে ডাকে আমাদের। আমরা কেবল চাই আর চাই। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে আমাদের ক্লাস এর ফার্ষ্ট গার্ল ছিল এমি। আমি তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। এমি ছিল বাবা মা এর আহ্লাদী মেয়ে। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম একদিন এমিকে দেখছিনা ক্লাসে। পরে জানতে পারলাম এমি সুইসাইড করেছে। কারণ ছিল ঈদে দামী জামা দিতে মা এর অস্বীকৃতি এবং রাগান্বিত হয়ে বকা দেওয়া! বিষয়টা তখনো যেমন আমাকে নাড়া দিয়েছে, আজো দেয়। কত আবেগী আমরা!
যখন আমরা জুতা হারানো নিয়ে কেঁদে বুক ভাসাই, তখন আমরা ভাবিনা আমাদের আশে পাশের অনেকেরই পা নেই। ওদের জুতা পরার ভাগ্যও হয়না। আমাদের পা তো আছে, জুতা পড়ি আর না পড়ি!
পৃথিবী সত্যি বৈচিত্রময়! আমাকে প্রায়ই ভাবিয়ে তুলে। এত চাই চাই কেন আমাদের? অল্পতে কেন সন্তুষ্টি আসেনা? রাস্তার টুকাইদের দেখেছি কারো কাছে চেয়ে নেয়া ঝালমুড়ির ঠোঙ্গায় উড়োজাহাজ বানিয়ে সপ্নগুলোকে আকাশে ছুঁড়ে দিতে। ভিক্ষার থালা হাতে দুঃখিনী খালাকে দেখেছি একমুঠো ভাত আর কাঁচা মরিচ হলেই দিনটা চলে যায় পরম তৃপ্তিতে।
আমাদের তৃপ্তি কিসে? আমাদের সন্তুষ্টি কোথায়? আমরা দেখি বিল গেটসকে, তার সফলতায় ঈর্ষান্বিত হই। ভাবি আমাদের কপাল খারাপ। আমরা যদি ওর মত বিত্তশালী কিংবা প্রতিষ্ঠিত হতাম! আমরা নিজেদের অবস্থান থেকে কতটা উপরে উঠা যায় তা ভাবিনা। নিজে কতটা চেষ্টা করছি তা দেখিনা।
আমরা মরণ কাকুদের বেঁচে থাকা দেখিনা। প্রতিটা দিন তাদের জীবনের সাথে সংগ্রাম এর অধ্যায়গুলো হাত বুলিয়ে দেখিনা। আমাদের চাহিদার অন্ত নেই, এ চাহিদা বিরামহীন! সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে, আমাদের জীবন মান উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কিছু কিছু সময় মানুষের নৈতিকতা ও মানবতার প্রশ্নে আমাদের থমকে দাঁড়াতে হয়। পূর্ণতা আর সন্তুষ্টি আজ কোথাও নেই। আমরা এক অসম প্রাপ্তির খেলায় মেতেছি।

Add to favorites
1,379 views