প্রলাপ -
Mithila
Published on: অক্টোবর 24, 2017
কিছুদিন যাবত অনেক কিছু মাথায় ঘুরে আর লিখতে গেলে সব আরশুলাদের মত লুকায়।আর খুজে পাই না।কি যে করি।স্প্রে দিয়ে মারলেও মরে যাবে।আর তো লিখা যাবে না।জীবিত থাকতে লিখলেই তো পাঠক আমার রস খুঁজে পায় না আর মৃত শব্দ গুলো তো ওদের প্রাণ সতেজ করতে পারবে না।বরং লেখকের লেখায় হতাশায় ডুবে যাবে।এটা কোন লেখকের বৈশিষ্ঠ্য নয়।
আমি একজন লেখক।আমি ভালো থাকি না থাকি,দেহ প্রাণ থাক না থাক,বিবেক, মনুষ্যত্ব মানবিকতা এসব আমার ভিতর আছে কি নেই তা নিয়ে আমার চিন্তার সময় নেই।আমার চিন্তা আমার লেখা আর পাঠকদের নিয়ে।তারা আমার লিখা পড়ে যেন অনুভব করে জীবনকে।বাচঁতে শিখে,লড়তে শিখে,ভালোবাসতে শিখে,জীবনে চিনতে শিখে।তারা যেন আরো অনুভব করে আমার লেখায় শক্তি আছে তাদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার।তবেই না আমি আমার লেখা আর কলমের কালি সার্থক।
একজন কবি বা লেখক নিজের জীবনের চরিত্র কখনো লেখায় ফুটিয়ে তুলে না বা তুলতে চায় না।সে চায় তার প্রতিভা প্রকাশ করতে কিন্তু সে হয়তো জানে না একজন লেখক তার অবচেতন মনেই তার লিখনিতে চরিত্রের দাগ ফেলে।তার লেখার প্রতিটা অক্ষরের ফাঁকে ফাঁকে চরিত্রের রসে পরিপূর্ণ হয়ে শব্দ গঠন হয়।বাক্য তৈরি হয়ে এক একটি কবিতা বা গল্প পূর্ণতা পায়।আর পাঠক সমাজ তা গিলে খেয়েই আংশিক হলেও বুঝতে পারে কবি বা লেখকের চরিত্রের ধরন।নজরুল বিদ্রোহী কবি।আমরা তার লেখার প্রতিটা অক্ষরেই অনুভব কররি বিদ্রোহ।মনে হয় এক একটি শব্দ আগুনের গোলা বারুদ।চার পাশের অন্যায় জুলুমকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে।তার লেখা পড়লেই মনের ভিতর কেমন উত্তেজনা শুরু হয়।রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। মনে হয় সমাজের সব অসুন্দর কুসংস্কার গুলোকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে ফেলে মনের মত করে সাজিয়ে সমাজ গড়ি।রবীন্দ্রনাথ ভালোবাসা জাগানোর কবি।তিনি তার লেখনিতে ভালেবাসায় উজ্জল হওয়া থেকে শুরু করে বিরহে কাঁতর হওয়াও বুঝিয়েছেন।ভালোবাসার জন্য অপেক্ষায় এক পরম সুখ।ত্যাগেও শান্তি আছে।জসিমউদ্দিন প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন কতটা তার লেখায় বুঝা যায়।তিনি কতটা কাছ থেকে প্রকৃতিকে দেখেছেন ভালোবেসেছেন ফুটিয়ে তুলেছেন তার কবিতায়।সতেন্দনাথ দত্ত ছন্দের জাদুকর।প্রতিটা কবিতায় কেমন মাতাল করা তাল ছন্দ।কবিতা পড়লে মনে হয় কবিতার শব্দের তালে আমার মনও নাচছে।মাইকেল মধু সূদন বিলাসী কবি।তিনি উচ্চবিলাসী সেটাও তার কবিতায় বুঝিয়েছেন।সমরেশ মজুমদার,নির্মলেন্দু গুন কামনা প্রিয়।তাদের সব লেখনিতেই প্রায় সূক্ষভাবে এটা তুলে ধরেছেন।
অনেক লেখক আছে যারা ভালোবাসায় কষ্ট পেয়েছেন তারা সবাইকে বলে ভালো আছি কিন্তু তার লেখায় বিরোহ ফুটিয়ে তুলে।যারা মনে প্রাণে মানবিকতা পোষণ করে তাদের লেখাতেও মানবের অধিকার ভালোবাসা, দুঃখ কষ্ট,চাহিদা এসবের কথা লেখা থাকে।সত্যি বলতে আমরা কেমন তা কাউকেই বলতে চাই না।কিন্তু আমাদের কর্মে তা ফুটে উঠে।তবে প্রতিটা লেখকই চায় তার লেখায় একজন পাঠক হলেও অনুপ্রাণিত হোক।জীবনকে চিনতে শিখুক,ভালোবাসতে শিখুক।মানুষের ভিতরে বিবেক জাগ্রত হোক।আজকাল আমি আর লিখতে পারি না।পারবোই বা কি করে।লিখতে গেলেও পড়তে হয়।আমি তো পড়ি না।আমি যদি নিজেই না জানি তো আমার পাঠককে জানাবো কি? তারা তো আমার উপর একটু হলেও ভরসা করে জিছু শিখবে জানবে বলে আশায় থাকে।একজন লেখকের প্রতিটা লাইন এমন হওয়া উচিত যেন সেই একটি লাইনেই পাঠক সুখ দুঃখ,হাসি কান্না,ভালোবাসা,মায়া মমতা সব খুঁজে পায়।লেখা পড়ে যেন অনুভব করে এত আমায় নিয়েই লেখা।লেখক বুঝলো কি করে আমার জীবন এমন।আমি তো কখনো লেখককে বলি নি!যখনই একজন পাঠকের মনে এমন অনুভব হবে আমার মনে হয় তখনই সেই লেখকের লেখার কষ্ট সার্থক।উফ মাথা এমন ঘুরছে, যন্ত্রণা করছে।
কি লিখছি বুঝতে পারছি না।আজকাল আরশুলারা সত্যি বড্ড বেশি জ্বালাচ্ছে।এমনিতেই পড়তে পারি না আার লেখার সময় যদি এমন উড়ে এসে নিজেদের প্রজাপতি ভাবে তাহলে তো আর সহ্য হয় না।এগুলো মারতেও পারছি না।প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অধিকারতো আমার নেই।তারা যে এভাবেই আনন্দ পায়।কারো আনন্দ কেড়ে নিতে নেই।
প্রতিটা প্রাণীর বেঁচে থাকার অধিকার আছে।তার সব চাওয়া পাওয়া ইচ্ছা আছে।আমাদের এসবের মূল্য দেওয়া উচিত।আমি মনে করি একজন লেখকের প্রাণ হচ্ছে তার লেখা।একটি লেখার পিছনে লেখকের অনেক না বলা কথা,অব্যক্ত কষ্ট লুকানো থাকে।থাকো আরো অনেক অজানা কাহিনী।মনের সব টুকু ভালোবাসা উজাড় করেই লেখক আপন মনে লিখে।কেউ যদি তা কেড়ে নেয় তবে কতটা কষ্ট হয় তা বুঝানোর ভাষা হয়তো নেই।যেমন একজন মা যেমন নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসা দিয়ে সন্তানকে বড় করে তুলে ঠিক তেমন ভাবেই লেখক তার লেখায় প্রতিটা অক্ষর,শব্দ বসিয়ে বাক্য গঠন করে। চাইলেই কবি বা লেখক হওয়া যায় না।এসবের জন্য সাধনার ধৈর্য্যের প্রয়োজন।আমি ইদানিং একটু লিখতে চাই। দু এক লাইন লিখে যদি কিছু একটা করা যায়।কিন্তু পারি না।সব আবোল তাবোল,তালগোল পাকিয়ে ফেলি।যাই দু এক শব্দ লিখি বাক্য গঠন করবো কিন্তু এই আরশুলাদের জন্য আর পারি না।কি যে শুরু করেছে। আজকাল খুব বেপরোয়া হয়ে গেছে। কেন যে মারতে পারছি না জানি না।
এখন কি শরৎ কাল?? যদি তাই হয় তাহলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবো।অনেক দিন হলো বাইরে দেখা হয় না।এখনোও প্রকৃত থেকে অনেক দূরে আমরা।”
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপর,
এককটি শিশির বিন্দু।”
আরশুলারা থাকুক নিজের মত।আর আমি সাদা ভেলার নীল আকাশের নিচে কাঁশফুলের সৌন্দর্য্য মুগ্ধ হবো।কত দিন এমন দৃশ্য দেখি না।আচ্ছা শরতের একটা গান আছে না”আজ ধানের শীষে রৌদ্র হেসে লুকোচুরি খেলারে ভাই লুকোচুরি খেলা।নীল আকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের ভেলারে ভাই সাদা মেঘের ভেলা।”

Add to favorites
1,073 views