শান্তুনু -
এইচ বি রিতা
Published on: আগস্ট 19, 2013
শান্তুনু,
জানিনা, আমার এ চিঠি কখনো তোমার হাতে পৌছুবে কিনা! আজ তোমাকে খুব মনে পরছে! সেই কখন থেকে, তোমার ছবিটা হাতে বার বার চোখটা ভিজে উঠছে! পাশের মানুষ গুলো গভির ঘুমে বিভোর। আমার চোখে ঘুম নেই!
কেমন আছো খোকা ? কতদিন তোমায় দেখিনা!
তুমি হয়তো জাননা, গেল বছর, তোমার বাবা চলে গেল! যাওয়ার আগে, তোমায় দেখার সে কি বায়না মানুষটার! আমি বলেছি খোকা এখন ব্যাস্ত! কত কাজ তার! বাবার মন তো! সে কি আর বোঝে!
শান্তুনু, বউমা আর সোনাবাবু কেমন আছে? ওদের খুব মনে পরে!
সোনাবাবু কি দেখতে ঠিক তোমার মত? বড় সাধ জাগে দেখার!
খোকা, একটা কথা! তুমি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছো? বউমা কে দেওয়ার মত কিছু ছিলনা যে আমার ! মনে আছে তোমার খোকা, যে বছর তোমার বাবার চাকরী চলে গেলো, তোমার সে কি পেট এ ব্যাথা উঠলো! অর্থ অভাবে, ভালো চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না।বউমার জন্য রাখা সোনার কাঁকন দূটো তখনই বেঁঁচে দেই।মনে কষ্ট রেখনা খোকা!
তোমার পেট এর ব্যাথাটা কি এখনো হয়? ভালো ডক্টর দেখিয়ো। মনে পরে খোকা, রাতে ঘুমানোর আগে, তোমার চুলে বিলি না কাটলে, তুমি ঘুমাতেই পারতেনা! রাতভর জেগে থাকতে! কতদিন সংসারের নানান ব্যাস্ততায় তোমাকে বিলি কেঁটে দিতে পারিনি।আজ এত অবসর সময় আমার! আজ তোমায় খুঁজে পাই কোথায়! পাশের রুমের সালেহার চুলে প্রায়ই বিলি কাটি সন্দ্ব্যা নামার মুখে। কিন্তু তোমার চুলের ঘ্রান তো পাইনা!
শান্তুনু, একটা কথা! তোমাকে দেখার বড় ইচ্ছে হয়। আমি জানি তুমি এখন মস্ত বড় হয়েছো। মন যে মানেনা খোকা! যদি কখনো সময় করতে পারো, এসে একবার দেখে যেও।প্রতি ভোরে চোখ মেলার আগেই তোমাকে দেখার চেস্টা করি কল্পনায়।চোখ মেললেই,নাগরিক কোলাহলের ভিরে, সৃতিরা ঝাপসা হতে থাকে। তোমায় আর দেখিনা!
জানিনা আর দেখা হবে কিনা! তুমি নিজের যত্ন নিও। সময় মত খেও। বউমা কি জানে, তুমি ঘুমের মাঝে বার বার গায়ের কাঁথা সরিয়ে ফেলো! কখনো দেখা হলে, বউমা কে বলে দিতাম।
আবারো চোখটা ঝাপসা হয়ে উঠছে! কি যে হয়েছে আজকাল! যতই চোখ মুঁছি, বার বার ভিজে উঠে! নাহ খোকা, ভেবনা তোমার জন্য মন খারাপ করছি। বয়স হয়েছে তো!
আমি ভালো আছি। তুমিও ভালো থেক। আজ আর লিখব না শান্তুনু ! বিদায় নিলাম!
ইতি
তোমার বৃদ্ব মা।
বৃদ্বাস্রম থেকে।
—————–

Add to favorites
1,438 views