শিশু যৌন নির্যাতন -
এইচ বি রিতা
Published on: জানুয়ারী 5, 2015
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন অনেক বেশী পরিমানেই আছেন, যারা ছোটবেলায় অতি নিকট আত্বীয় বা আশেপাশের পরিজনদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু সেটা পরিবেশগত কারণে অপ্রকাশ্যই রয়ে গেছে।
আসুন জেনে নেই শিশু নির্যাতন কি ও কত প্রকার…
শিশু নির্যাতন হলো সর্বাবস্থায় কোন শিশুকে অপব্যাবহার করা। শিশু নির্যাতন সাধারনত ৪ প্রকার।
শারীরিক নির্যাতন(physical abuse), মানসিক নির্যাতন (emotional /psycological abuse), অবহেলাজনিত নির্যাতন(neglect abuse) ও sexual abuse(যৌন নির্যাতন)।
শিশু নির্যাতন নিয়ে অতীতেও লিখেছি, আজ আবারো শিশু যৌন নির্যাতন নিয়ে একটা বিশেষ কারণে পুনরাবৃত্তি করছি।
শিশু যৌন নির্যাতন বলতে আমরা কি বুঝি?
পেশা ভেদে যৌন নির্যাতনের সংজ্ঞা ভিন্ন। তবে একজন পেশাদার এবং চাইল্ড সাইকোলজি ও ফ্যামিলি সাইকোলজিতে গ্রাজুয়েটেড হিসাবে আমার মতে, শিশু যৌন নির্যাতন এমন একটি জিনিস যেখানে কোন ব্যাক্তি বা শ্রেণি একটি শিশুকে তার অতৃপ্ত বা অপূর্ণ যৌন বাসনা পূরণে ব্যবহার করে থাকেন।
যেমনঃ শিশু পর্নগ্রাফি, শিশুর যৌনাংগে জোরপুর্বক বা ফুসলিয়ে কোন কিছুর প্রবেশ, শিশুর গায়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ছুঁয়ে দেয়া, শিশুকে জোরপুর্বক কারো যৌনাংগে ধরতে বাধ্য করা, কাপর বদলের সময় ইচ্ছাকর্ত শিশুর শরীরে চোখ বুলানো ও শিশুর সাথে যৌন সঙ্গম।
বছর বছর ধরে, এমন করেই শিশুরা কিছু সংখ্যক পুরুষের বিকৃত যৌন রুচীর শিকার হচ্ছে। শুধু যে মেয়ে শিশুরাই হচ্ছে, তা নয়। ছেলে শিশুরাও সমভাবে পুরুষ দ্বারা এই যৌন নির্যাতনের শিকার। এবং যারা করছেন এ অপরাধগুলো, তাদের বেশীর ভাগই আমাদের নিকট আত্বীয়।
শিশু যৌন নির্যাতনের কারণ কি?
এর কোন সঠিক ব্যাখা আজো কোন মনোবিজ্ঞানী বা সমাজবিজ্ঞানী স্পষ্ট করে দিতে পারেননি । তবে যুগ যুগ ধরে নানান গবেষণা ও তথ্যের ভিত্তিতে আমার দৃষ্টিতে যে কারণগুলো শিশু যৌন নির্যাতনের ঝুঁকি হিসাবে কাজ করে, তা হলো,
– অশিক্ষা
– নিন্ম পরিবেশ
– নেশা
– পারিবারিক হতাশা
– পরিবার আশে পাশে কাউকে সেক্সুয়ালী এবিউজ হতে দেখা
– নিজে কারো দ্বারা এবিউজ হওয়া
– জীবন সঙ্গীনীর সাথে যৌন তিক্ত অভিজ্ঞতা।
গত কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ প্রতিবাদী ফাউন্ডেশন ও সুইডেন & ডেনমার্কের Save the Children একটি যৌথ সমীক্ষা চালায়। সেই সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ৫০% শিশু অর্থাৎ প্রতি ২ জনের ১ জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এর ৯১% যৌন নির্যাতন পরিবারের আত্বীয়দের দ্বারা সংগঠিত হয়।
শিশু নির্যাতনের ফলে একটি অপ্রাপ্ত শিশুর কি ধরণের মানসিক সমস্যা হতে পারে, তা হয়তো অনেকের ধারণার বাহিরে।
একটি শিশু, সে কেবলই শিশু। যৌনতা বা পাশবিকতা সম্পর্কে তার ধারণা নেই। সে মাত্র চোখ খুলে পৃথিবীকে দর্শন করতে শিখছে। সে মুহুর্তে এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতাকে বাস্তবিক অভিজ্ঞতা হিসাবে মেনে নিতে সে অক্ষম। কেননা তখনো শিশুটির মস্তিষ্ক পরিপক্ক হয়নি। যৌন নির্যাতনের ফলে দেখা যায় শিশুটির সঠিক মানসিক বৃদ্ধি ওখানেই থমকে যায়। সাইকোলজির ভাষায় যাকে কগনেটিভ ডিলে বলা হয়।
যৌন নির্যাতনের ফলে একটি শিশুর যে ধরনের সমস্যা হতে পারে, তা নিন্মে দেয়া হলোঃ
– আত্ববিশ্বাস কমে যাওয়া
– জাগতিক আনন্দ হতে নিজেকে সরিয়ে রাখা
– পুরুষের প্রতি আজন্ম বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরী হওয়া
– সম্পর্কের উপর আস্থা হাড়ানো
– হোমোসেক্চুয়ালিটি যেমন, সমকামীতার প্রতি ঝুকে পরা
– নির্যাতনকারী গোত্রের প্রতি বিদ্বেষ থেকে কখনো কখনো সেই গোত্রের প্রতি অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়াকে সাভাবিক ভাবা
– নেশাগ্রস্থ হয়ে পরা
– সামাজিক অপরাধকে স্বীকৃত অপরাধ হিসাবে ভাবা
– পড়াশোনায় অনিহা
– নিজেও এক সময় সম অপরাধে স্বাচ্ছন্দবোধ করা
– বিষন্নতা বা একাকীত্ব
– নিজেকে সর্বাবস্থায় অপরাধী ভাবা
– অসামাজিক হয়ে উঠা
– সত্যকে মেনে না নেয়া
– বিভিন্ন মানসিক অসুস্থায় ভোগা, যেমন- মুড সুইং, ওসিডি, এংজাইটি ডিসওর্ডার, ইটিং ডিসঅর্ডার, ডিপ্রেশন, পার্সোনালিটি ডিস্অর্ডার সহ লং টার্ম ট্রাওম্যাটিক স্টেইট অতিক্রম করা।
যেভাবে দিন দিন শিশু নির্যাতন বেড়ে চলেছে, তার প্রতিকার রোধে মিটিং মিছিল করে কোন লাভ নেই। এ ব্যাপারে যা করণীয় তা হলো মা-বাবাকে তার ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তানটিকে নিরাপদ রাখতে সচেতন করে তোলা।
প্রতিটি মা-বাবাই তার সন্তানকে অসীম ভালবাসেন। কিন্তু আমাদের দেশে মা-বাবারা অনেকেই সঠিক পেরেন্টিং না জানার কারণে তার সন্তানটিকে খুব সহজেই বিপদগামী করে ফেলেন। পেরেন্টিং নিয়ে অন্য আরেকদিন আলোচনা করবো।
প্রতিটি মা-বাবাকে তার সন্তানের প্রতি সহনশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে যেন সন্তানটি যে কোন সমস্যায় মা-বাবাকে ভয় বা সংকোচ না করে, শেয়ার করে।সন্তানকে সময় দিতে হবে। আন্তরিক হতে হবে। সম্তানের সাথে বিশ্বস্ততার বন্ধন গড়ে তুলতে হবে যেন শিশু সন্তানটি এবিউজ হলেও, সারা জীবন মনে পোষণ করে নিজেকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে না ফেলে। সন্তানকে বুঝাতে হবে সে বড় হচ্ছে, সেই সাথে অনেক ভয়ংকর পৃথিবীর সাথে মিশে যাচ্ছে সে। সেখান থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা জরুরী। বুঝাতে হবে যে সবার মত তার ও কিছু পার্সোনাল জায়গা রয়েছে শরীরে যেখানে কারো হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ।
যতদিন মা-বাবা সচেতন না হবে, ততদিন শিশু যৌন নির্যাতন কমবে না। অপরাধের শুরু আছে। শেষ নেই। সচেতনা ও সঠিক পরিচালনায় পারে কেবল অপরাধকে দমাতে।
_______

Add to favorites
963 views