শোনায় সমস্যা -
তরুন ইউসুফ
Published on: মার্চ 25, 2019
ইদানিং আমার শোনায় সমস্যা হচ্ছে। এই কথা জানার পরে অনেকে মুচকি হেসে বলবেন এই বয়সেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে কেমনে বাকি জীবন চলবে। শত্রুরা অবশ্য খুব একটা স্বস্তি নিয়ে বলবে যা শালা উচিৎ শিক্ষা হয়েছে। খোঁড়া হয়েছিস তো একদম মোক্ষম জায়গায়। একদম ঝাড়ে বংশে নির্বংশ হবি। অনেকে যারা শুভাকাঙ্ক্ষী তারা অবশ্য খানিকটা সান্ত্বনা দিয়ে বলবেন আরে চিন্তা করো না আজকাল অনেক হারবাল টারবাল বের হয়েছে। শুনেছি ওসবে নাকি কাজ হয়। একটু চেষ্টা চিকিৎসা কর, ঠিক হয়ে যাবে। আসলে শত্রু মিত্র উভয়েই আমাকে ভুল বুঝেছেন। আমি আসলে যে সমস্যার কথা বলেছি সেটা ওই সমস্যা না আমি বুঝিয়েছি শোনায় সমস্যা অর্থাৎ হিয়ারিং প্রবলেম।
এখন প্রশ্ন হল আমি কি তবে কানে কম শুনি? মোটেও না। দুএকবার এই সন্দেহ আমারও হয়েছে। তাই বেশ বড়সড় বিশেষজ্ঞ দেখিয়েছি। তারা বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রায় দিয়েছে আমার কানে কোন সমস্যা নেই। তবে সমস্যা কি? সমস্যা হল আমি শুনি ঠিক আছে তবে ভুল শুনি।
কি ধরনের ভুল। একটু উদাহরণ দেই। আমার বড়মা মানে আমার বাবার নানী কিছুদিন আগে বয়সের দিক থেকে সেঞ্চুরি হাকিয়ে গত বছর গত হয়েছেন। খুব স্নেহ করতেন আমাদের। তারই কোলেপিঠে মানুষ হয়েছি আমি। আমার সেই বড়মা শেষ দিন পর্যন্ত বেশ সুস্থভাবে হাঁটাচলা করে গেছেন। তার সবদিকেই ঠিক ছিল শুধু সমস্যা ছিল চোখে। তবে তার কান ছিল টনটনে। রাতের বেলা তার ঘুম হত কম। একটু টুকটাক শব্দ হলেই উনি বুঝতে পারতেন। তবে শুনতেন ঠিক কিন্তু ভুলভাল।
বড়মার ঘর লাগোয়া ঘরে যিনি তখন থাকতেন তার নাম আমজাদ হোসেন। সম্পর্কে আমার ভাই হন। উনি স্কুলের দপ্তরির চাকরি করেন মানে ঘণ্টা বাজান। যেহেতু ইনকাম কম তাই চাকরির পাশাপাশি নানা কিছু করার চেষ্টা করেন। যেমন মুদি দোকান দিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর সে দোকানের চালান হারিয়ে লালবাতি জ্বলে গেল। তারপর শুরু করল হাঁস পালন। সে হাসের দলের ডায়রিয়া হয়ে পুরো পাল শেষ হয়ে গেল। এখন হোমিওপ্যাথ প্র্যাকটিস করেন। গ্রামের লোকের ছোটখাট সমস্যায় টুকটাক ওষুধ দেন। তো একদিন রাত্রে গ্রামের এক লোক তার কাছে এসেছেন সমস্যা নিয়ে। সমস্যাটা অবশ্য জটিল। অন্ডোকোষে ব্যাথা। হোমিওপ্যাথের ডাক্তাররা সাধারণত কোন রোগের বিষয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বর্ননা শোনে। সে অনুযায়ী আমজাদ ভাইও রোগীর অণ্ডকোষ বিষয়ে বিস্তারিত শুনে ওষুধ দিলেন। বড়মা যেহেতু লাগোয়া ঘরে থাকেন তাই ডাক্তার এবং রোগীর কথোপকথনের বিস্তারিত বড়মার কানে গেল। পরদিন সকালে আমজাদ ভাইয়ের সাথে বড়মার দেখা হতেই বড়মা খানিকটা রাগত স্বরে বললেন ‘কি বাপু তোরা রাতভর নন্দকোষ নন্দকোষ করিস, এমনি ঘুম কম হয় তারপর তোদের এইসব নন্দকোষের জ্বালায় ঘুমাইবার পারি না।
যাইহোক শুনতে ভুলকরায় এবং বুঝতে ভুল করায় অণ্ডকোষ হয়ে গেছে নন্দকোষ।
এইরকম অণ্ডকোষ থেকে নন্দকোষ জনিত ভুল না করলেও মাঝে মাঝেই অন্য ধরনের ভুল করে বসি
যেমন ধরুন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি হুট করে নিজের নাম শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি অপরিচিত লোক। তার দিকে এগিয়ে কিজন্য ডাকলেন জিজ্ঞেস করতেই ভুল ভাঙ্গে। উনি আসলে ডেকেছেন ধরেন মোকছেদকে আমি শুনেছি আমার নাম। একবার তো বিপদেই পরে গেছিলাম। এক মহিলার কণ্ঠে আমার নাম শুনে হাসিমুখে এগিয়ে যেতেই কেস খেয়ে গেলাম। ভদ্র অভদ্র সহ যা বলার নয় সেসব তো বললই সাথে শুনিয়ে দিল আমাদের মত বেলেহাজ মানুষের জন্য জাতির এই দশা। সে যাত্রায় কোনমতে পালিয়ে বেঁচেছিলাম। এরপর এইধরনের ডাক শুনে আর কান দেই না। এতে অবশ্য অন্য ধরনের সমস্যা হয়। অনেক সময় কেউ আসলেই আমার নাম ধরে ডাকে আমি না শোনার ভান করে চলে যাই। যে ডাকে সে যদিও রাগ করে। তা করলে করুক আমি তো বিপদ থেকে বেঁচে যাই।
রাস্তায় না হয় বেঁচে গেলাম কিন্তু ঘরের ভেতরেই যখন হাইকোর্ট তখন কি আর সবসময় বাঁচা যায়? আমি কোন কাজে ঢুকে গেলে সে যাই করি না কেন দিন দুনিয়ার খেয়াল থাকে না। এটাই হয় কাল। বউ ধরেন রান্না করছে রান্না ঘরে। আমি হয়ত শোবার ঘরে বসে কাজ করছি। বউ ডাকছে শুনছি না। শুনব কি করে মাঝখানে আস্ত একটা দেয়াল। কিন্ত একবার দুইবার ডাকার পর না শুনলে ব্যাস বউয়ের মেজাজ তেড়িয়া। রান্না ঘর থেকে অগ্নিশর্মা হয়ে মা কালী আমার সমুখে। চিল্লায়া চিল্লায়া গলা ফাটায়া ফেললাম কানের কি মাথা খাইছ। এভাবে মাঝে মাঝেই বউয়ের কল্যাণে কানের মাথা খেতে হয় আমাকে।

Add to favorites
777 views