স্পর্শ -সোহানা নাজনীন -
কাব্য কবিতা
Published on: ডিসেম্বর 26, 2022

পঞ্চাশ পার করা শরীরে জবুথুবু একটা শাড়ি প্যাঁচানো অবস্থায় ট্যাক্সি ক্যাব থেকে নামলেন মনোয়ারা। জমকালো ধরনের পার্টি হল, সাজগোজের কমতি নেই, দিনের আলোর মতো বাতি চারিদিকে। বিয়ে বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল, অল্প অলঙ্কারে তার প্রসাধনহীন মুখটায় একটা বিষাদের ছায়া যেন। সোনালি প্যাকেটে মোড়ানো উপহার হাতে নিয়ে মনোয়ারা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন, কোনদিকে যেয়ে কাদের সাথে কথা বলবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। চারিদিকে সবাই চকচকে পোশাকে জড়ানো, আজকের জন্যে সেরা সাজটা-ই দিয়েছে। হাস্যরসে ভেঙ্গে পড়ছে একের কাধের উপরে আরেকজন, ক্লান্ত চোখে সেসব দিকে তাকাচ্ছেন মানোয়ারা। বেশির ভাগ মানুষকেই উনি চেনেন না, আর চিনবেনই বা কি করে। ফ্লোরা’র বাবা-মা, ভাই ছাড়া আর কারো সাথে পরিচয় নেই মনোয়ারার।
ফ্লোরা মেয়েটা ভীষণ চনমনে স্বভাবের। ঈদে, জন্মদিনে বাসায় বেড়াতে আসতো, হই চই করে বাড়ি মাতিয়ে আবার চলে যেত। মনোয়ারা ভীষণ খুশি হতেন মনে মনে, কিন্তু বাইরে প্রকাশ করতেন না। বড় ছেলে যে মেয়েকে পছন্দ করেছে সেই মেয়ে বাড়ি এসে ঘুরে যায়, একথা আত্মীয় স্বজন শুনলে নানান কথা শোনাবে। ছোট ছেলে ধমক দিয়ে বলতো, ‘মা, আজকাল এসব আর কেও মানে না। পেটের ছেলেরা যে মেয়ের সাথে প্রেম করে তাদের সাথে মায়েরা শপিংয়ে যায়, একসাথে আইসক্রিম খায়। বান্ধবীর মতো সম্পর্ক তাদের, বিয়ের শাড়ি-গহনাও একসাথে কেনে।
মনোয়ারা গোপনে হাসতেন, এখনো সময় হয়নি বড় ছেলের চাকরিটা পাকাপোক্ত হলেই ফ্লোরার বাসায় বিয়ের কথা পাড়বেন।
পুরোন দিনের কথা ভাবতে ভাবতেই দোতলার সিঁড়ির কোণে ছোটছেলের সাথে মুখোমুখি হয়ে গেল।
‘আহা মা! তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে? ফ্লোরা আপুর সাথে দেখা করে গিফটের প্যাকেট দাওনি?’
মনোয়ারা প্যাকেটের গায়ে হাত বোলালেন, ভিতরে ফ্লোরার পছন্দের জাম রঙের হাফ সিল্ক বালুচরি শাড়ি। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ঝাপসা চোখে উনি সিঁড়ি ভাঙছেন, উপরে কনের স্টেজ আলো করে বসে আছে মেয়েটা। দূর থেকেই দেখলেন, কাছে যাবার ইচ্ছাটায় শঙ্কা বাসা বেঁধেছে। প্যাকেটের শাড়িটা আজ থেকে আড়াই বছর আগে মনোয়ারা কিনেছিলেন পানচিনি উপলক্ষে। সেই পানচিনি আর হয়নি, বড় ছেলে বন্ধুদের সাথে টঙ্গীর ওদিকটায় কার এক্সিডেন্টে এই পৃথিবী ছেড়েছিল।

Add to favorites
622 views