স্বীকারোক্তি -
এইচ বি রিতা
Published on: জানুয়ারী 14, 2017
আমি একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছি। সরল স্বীকারোক্তি দিলাম। আমার সরলতার জন্য অবশ্যয়ই আমাকে সাহসী প্রশংসা দিবেন। কেন দিবেন না? রোজ কতজন ধর্ষণ করছেন আড়ালে আবডালে! কেউ তো স্বীকারোক্তি দিচ্ছেননা, আমি দিয়েছি। দয়াকরে সুশীল সমাজের গর্ধবেরা বলবেননা যে ধর্ষণের জন্য এখন আমার লিঙ্গ কাটা হোক!
এই যে দেখুন, আমাদের দেশকে ভারত-মার্কিন ধর্ষণ করে করে সাদা-হলুদ বীর্য জনতার গলার ভিতর ঢেলে দিচ্ছেন, তারা সে বীর্য খুব আস্বাদনে চেটেপুটে গিলছেন! কেউ তো আপত্তি করছেন না! বিচার চাচ্ছেন না! হলমার্কের নাম করে সোনালী ব্যাংক দেশের আবাল জনতাকে ঘুমে রেখে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা পায়ুপথে মেরে নিয়ে গেল, কে আন্দোলন করেছেন? নিতম্ব দেখিয়ে বিসমিল্লাহ গ্রুপ জনগনের প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিল, আর রাষ্ট্র জনতার শিরায় সাক্সিনিলকোলিন পুশ করে স্বস্তিতে ভোষন সারলো। তারপর কি হল? বেসিক ব্যাংকের এমডি জনতার হাজার হাজার কোটি টাকা আবারো পায়ুপথে মেরে দিল, দুদক তাকে ঘাঁটাতে সাহস পেলনা, পাছে দুদকও মারা খায়। হলমার্কের মারা খাওয়া ঘা শুকাতে না শুকাতে অজ্ঞাত ধর্ষকরা বাংলাদেশ ব্যাংককে এক হাত মেরে দিল, রিজার্ভ থেকে জনগনের কষ্টে জমানো টাকা নিয়ে গেল। অর্থ মন্ত্রনালয় উদ্যেগ প্রকাশ করে বললেন, “এত হার্ডকোর মারা জীবনে খাইনি; আমরা চিন্তিত, ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন।” রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেরারা যদি প্রকাশ্যে রাষ্ট্র ও জনতাকে ধর্ষণ করে টক শোতে সেলিব্রেটি হয়ে টিবির সামনে বসে, তবে আমি কেন একটি মাত্র ধর্ষণ করে লিঙ্গ কাটা পরবো?
এই দেখুন, কথার খেই হারিয়ে ফেললাম। বলছিলাম ধর্ষণের কথা, আমি একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছি। হ্যা করেছি! বেশ মজাও পেয়েছি। মানুন আর নাই মানুন, ভোগবাদী সমাজে নারীমুক্তির স্লোগানের আড়ালে নারীরা চিরকালই ভোগের পণ্য। যে দেশের সরকার একজন নারী, যে দেশের বিরোধী দলীয় নেত্রী একজন নারী, যে দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নারী,পররাষ্ট্র মন্ত্রী নারী, সে দেশে কেন নারী প্রতিদিন ধর্ষিত হয়?
যাই হোক, আমার ধর্ষণের কথা বলি। বয়স আমার কম হয়নি, যৌন ইচ্ছা হতেই পারে! আমি তো নুপুংশুক নই। আমার মা ছিলেন নিতান্তই সরল মানুষ। বাপকে জীবন দিয়ে সেবা করতেন। কিন্তু কি কারণে ঠিক জানিনা, ছোটবেলাতেই বাপকে দেখেছি মা’কে রেখে ভিন্ন এলাকায় আরেক বউ রাখেন। দুই রাত আমার মায়ের ঘরে খিল দেন, দুই রাত সৎ মায়ের ঘরে। আহা! ওদল-বদল স্বাদ!
শুধু তাই না! মা যখন নানা বাড়ী যেতেন, বাপ যেতেন রান্না ঘরে মাঝরাতে! পানি খেতে নয়, কাজের বুয়াকে জাগাতে। আমি দেখতাম, মা’কে বলতাম না। কেন বলব? আমি তো পুরুষ! বাপকে দেখে আমি শিখবনা?
বয়স যখন চৌদ্দ কি পনের, শরীরে উত্তাপ পেতাম হুটহাট। তখন ঠিক বুঝতাম না শরীরের অস্বস্তির কারণ। বুঝতামনা কি করা উচিৎ? কি করে বুঝি? আমাকে কেউ তো বলেনি বয়োসন্ধির রহস্য! কেউ তো দেখায়নি শরীরেরএ জ্বালা দমনের সঠিক পথ! বন্ধুদের দেখতাম দল বেঁধে বাথরুমে ছুটে। আমি ভয় পেতাম।
একদিন আমার ছোট মামাতো বোন এলো আমাদের বাড়ী বেড়াতে। রাতে আমি, আমার ছোট ভাই ও মামাতো বোন এক ঘরে ঘুমালাম। এক বিছানায়।
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখি মামাতো বোনের এক পা আমার উপর। বুক উদোম। রক্তে কিছু একটা বিদ্যূৎ বেগে তেড়ে এলো! কিছু না বোঝেই বোনের হাতে হাত দিলাম!
পরদিন সকালে কি হল জানিনা, তবে বাপ স্পষ্ট মা’কে জানিয়ে দিলেন, মামাতো বোন যেন এ বাড়ীতে না আর কখনো না আসেন।
এই না হলে বাপ! কত্ত ভালবাসেন বাপ আমাকে! যৌবনবতী বোনের গায়ে হাত দিলাম, সাজা পেলেন বোন!
মা’কে প্রায়ই কাঁদতে দেখতাম। কি কারণে কাঁদতেন জানিনা। তবে আমার খুব একটা দরদ হতনা মা’য়ের জন্য। বাপ বলতেন, “নারীর জন্মই হইসে কান্দার জন্য!”
যখন বড় হলাম, রাস্তায় কোন মেয়েকে দেখলে সন্মান জাগত না। মনে হত শুধু ছুঁয়ে দেখি। শরীরে কেমন রক্ত সন্চালন বেড়ে যেত। হুট করে চোখে ভাসতো রান্নাঘরে গিয়ে বাপের খিল দেয়া!
এই দেখুন! আবারো কোথায় চলে এলাম! বলছিলাম ধর্ষনের কথা। ধর্ষণ করি আমরা প্রতিদিন। কি হয়? ক’জনের বিচার হয়? ধর্ষণ করি আমরা, আবার আমরাই বুক ফুলিয়ে, কলার উঁচু করে বীরের বেশে এলাকায় ঘুরে বেড়াই।আর ধর্ষিতার স্থান হয় নির্জন ঘরের কোনে, পত্রিকার পাতায়, থানায় পুলিশের ডাইরিতে, আদালতে অসভ্য উকিলের আপত্তিকর জেরায়। তাহলে আমরা ধর্ষণ করব না কেন?
হাস্যকর বিএনডব্লিউএলএ বলছে, ২০০৮ সালে ধর্ষণের শিকার ৩০৭ জনের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১১৪ জনকে। ২০০৯ সালে ধর্ষণের শিকার ৩৯৩ জন নারীর মধ্যে হত্যা করা হয় ১৩০ জনকে। ২০১০ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণের পর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৪২৭টি। গত ছয় বছরে ধর্ষণের পর ৫০৮ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু মামলা হয়েছে মাত্র ২৮০টি ঘটনায়। আর ধর্ষণের পর নাকি আত্মহত্যা করেছেন ১৬৮ নারী।
পরিসংখ্যান আবোল তাবোল বলে। নারী আন্দেলন করে। দিন শেষে আবারো আমরা তাদের মুখে কুলূপ এঁটে ধর্ষণ করেই চলি। আমাদের ঠেকায় কে? ধর্ষণ আমাদের মৌলিক অধিকার। জন্ম থেকেই আমাদের পরিবার- সমাজ শিখায় নারীকে যেভাবে খুশী ব্যবহার করো। আমরা নিজ পিতার বহুগমন দেখে শিখি। মাথাকে নতমুখে সব সয়ে যেতে দেখে শিখি। বয়োপ্রাপ্ত হওয়ার পর ছেলে-মেয়েতে অবাধ মেলামেশা থেকে শিখি। হাজার টাকা খরচ করে আমাদের পিতা-মাতা ইংলিশ-অংকে ভাল করার জন্য শিক্ষক রাখেন। তারা কি কখনো নৈতিক ও মানবিক গুন শিক্ষার জন্য ধর্ম শিক্ষকের পিছনে টাকা খরচ করেন? তবে জনতা কেবল ধর্ষকের লিঙ্গ কর্তন ও ফাঁশি চায় কেন? আমাদের তৈরী করেন পিতা, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র! তাদের ফাঁশির জন্য কেউ আন্দোলন করেছেন?
যতই চিৎকার করুন, ধর্ষণ আমরা করবোই! আমাদের জন্য বৈধ পর্ণ সাইটে ফোর্সড সেক্স, রেপ, এসব ক্যাটাগরী পর্ণ বৈধ। আমাদের জন্য ডিজিটাল পিতা-মাতা চাইলেই 3G নেটের ব্যবস্থা রাখেন। পর্ণ সাইটে বাহারী সেক্স পোজ গিলে ঘরে ফিরে যখন দেখি অনভিজ্ঞ স্ত্রী লাশ হয়ে বিছানায় থাকে, তখন মনে হয় “বিরিয়ানি ভেবে পান্তা ভাত” মুখে দিলাম।
ভারতের শিল্পী ডোনা গুপ্ত তাঁর এক গানে বলেছেন, “চিৎকার করো মেয়ে, দেখি যত দূর গলা যায়, আমাদের শুধু মোমবাতি হাতে নীরবে থাকার দায়, আমাদের শুধু ধ্বজা ভাঙা রথে এগিয়ে চলার দায়!” শুনুন মিস ডোনা, চিৎকার করুন যত পারেন। ধর্ষণ হতেই থাকবে! ক’জনকে ফাঁশি দিবেন? এই যে আমি ধর্ষণ করলাম, সাহস নিয়েই করলাম। আমার বাপ ক্ষমতাশালী, আমার কিছুই করতে পারবেননা।
ফালতু চিৎকার রাখুন। মূল হতে গোঁড়াপত্তন করুন যদি পারেন। ধর্ষক পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে বদলান আগে।
_______ডার্ক এভিল(HB Rita)

Add to favorites
696 views