হাহাকার -
শঙ্খ চিল
Published on: ডিসেম্বর 19, 2017
“মা”
আমায় চিনতে পারছো তুমি?
তাকিয়ে দেখো – আমি তোমার নিয়তি গো
তোমার সেই নিয়তি আমি,
যার ছোট্ট মুখখানি দেখে একদিন আনন্দে
তোমার চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়েছিলো নোনা ভালোবাসা।
মা,ভালোবাসা নোনা হয়?
মা’গো,আমি তোমার সেই ছোট্ট নিয়তি আজ প্রকৃতির নিয়মে বেড়ে উঠেছি।
মনে পড়ে!কোন এক জ্যোৎস্না রাতে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানি গান শুনাতে,
আঙ্গুল দিয়ে দূর আকাশের চাঁদ দেখাতে
আহা! সেই সুর হৃদয় জুড়ে যেতো আমার মা।
এতো মধুর কন্ঠ, আমার ঘোর লাগতো ভীষণ;
আমি ঘুমিয়ে পড়তাম তোমার কোলে পরম নিদ্রায় নিশ্চিন্তে, পৃথিবীর সবথেকে নিরাপদ আশ্রয় তুমি।
মনে আছে মা
সেদিন ভাই-বোন সকলকে হাতের মুঠো ধরে মেলা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলে?
দুঃখ-সুখের সেই মেলাতে আমি কেবল ছিটকে পড়লাম – দুঃখের মিছিলের ভিড়ে,
তুমি আমায় আর খুঁজলে না মা
অথচ,পৃথিবীর মায়েরা সন্তান হারিয়ে গেলে অঝোরে চোখের বৃষ্টি ঝরায়
কেঁদেছিলে তুমি মা আমায় হারিয়ে?
হারিয়ে গেলাম আমি অন্ধকারের অতল গহবরে,
আমায় খুঁজলেনা তুমি আর।
ঘর ভরা তোমার ছেলে-মেয়ে ছিলো,
ভেবেছিলে কি তুমি একটা সন্তান হারালে কি এমন ক্ষতি হবে!
তাই হয়তো আমায় ভেসে যেতে দিলে দুঃখ জলে।
জানো মা!ভাসতে ভাসতে পৌঁছলাম এক শহরে
সে শহরের নাম ছিলে বিষাক্ত শহর
সে শহর মৃত ছিলো;
বিলবোর্ড আর সাইনবোর্ড জুড়ে বড় অক্ষরে লেখা ছিলো – এখানে সহানুভূতির প্রবেশ নিষেধ!
একলা তোমায় ছাড়া ভীষণ ভয় হচ্ছিলো আমার।
ভয়ানক ভয়কে বুকে চেপে
বেড়িয়ে পড়েছিলাম সে শহরে;
বিষাক্ত শহরের ধুলোয় পদচিহ্নের ছাপ এঁকে বহুদূর হেঁটে চললাম,
শহর জুড়ে হিংস্রতার দাসত্ব।
ওরা ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার নরম তুল-তুলে শরীরের উপর,
ওদের ক্ষুধার্ত নখের ক্ষত-বিক্ষত আঘাতে –
রক্তে প্লাবিত করলো আমার শরীরকে।
মা’গো তোমার মুখটা ভেসে উঠেছিলো সে সময়ে!
আমার কষ্ট হয়েছিলো ভীষণ।
লাল রক্তে ভেসে যাচ্ছিলো শহরের পথ-ঘাট;অসহনীয় ব্যথা সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছিলো অণু-পরমাণুর মতন।
কষ্ট হয়েছিলো আমার,তখন তোমায় মনে পড়ছিলো খুব।
মা’গো আমি ঘুমাতে পারি না বহুকাল হলো
কোলে তুলে নাও,আমায় ঘুম পাড়িয়ে দাও;
মা’গো এ বিষাক্ত শহরে আমার একটি আশ্রয় দরকার;আমায় তুমি আশ্রয় দাও।
সন্তান আমি তোমার,আমার যে বড্ড তোমায় দরকার।

Add to favorites
561 views